দলের প্রতীক সোনালি আঁশ বরাদ্দ পেয়ে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ও দলটির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার বলেছেন, দেশের একমাত্র বিরোধী দল হচ্ছে তৃণমূল বিএনপি। জাতীয় পার্টি অনেক রংঢঙের পর সরকারি দলের অনুকম্পা নিয়ে নির্বাচন করছে। ১৪ দল তো আগেই সরকারের শরিক, একমাত্র বিরোধী দল তৃণমূল বিএনপি, যারা সারা দেশে ১৪২ জন প্রার্থী নিয়ে বিভিন্ন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
আজ সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের কার্যালয়ে নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রতীক সোনালি আঁশ বরাদ্দ পেয়ে প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তৈমুর আলম খন্দকার। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মোট প্রার্থী আছেন ৯ জন।
তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘গতকাল অনেক নাটক করে অন্যান্য বড় দলগুলো সরকারের অনুকম্পা নিয়ে নির্বাচন করছে। একমাত্র তৃণমূল বিএনপি বলে আসছে, আমরা আমাদের নিজস্ব মার্কা নিয়ে, নিজস্ব অবস্থান থেকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নির্বাচন করব। জনগণ ভোট দেওয়ার মালিক। জনগণ এটা বিবেচনা করবেন।’ জনগণকে ভোট দিতে আসার জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা ভোট দেওয়ার জন্য নিজেরা প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। যেখানে ব্যত্যয় ঘটবে, সেখানে ভিডিও করবেন, আপনারা ছবি তুলবেন, আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় পৌঁছে দেব, প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেব, গোটা বিশ্বে এটা পৌঁছে দেব।’
আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদও পেয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি ছিলেন বিএনপির প্রার্থী। শেষ মুহূর্তে দলের সিদ্ধান্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে দেশব্যাপী তখন আলোচনায় এসেছিলেন। তবে বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন খন্দকার তৈমুর আলম। তাঁরা এই সিদ্ধান্তের কারণে গত বছরের জানুয়ারিতে তৈমুর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।
এরপর গত ১৯ সেপ্টেম্বর তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন তৈমুর আলম খন্দকার। দলটির প্রথম সম্মেলন ও কাউন্সিলে তিনি মহাসচিব নির্বাচিত হন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘২০১৪ ও ২০১৮ সালে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় নাই। কিন্তু সরকার গঠন ঠেকানো যায় নাই। এই বিতর্কিত নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারকেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকৃতি দিয়েছে, তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে। আমি মনে করি, সব সময় কেন নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে দেব? প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই প্রতিরোধই একদিন পাহাড়ের মতো হয়ে দাঁড়াবে।’
প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী, তিনবারের সংসদ সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে জরিপ চালিয়ে তাঁকে আবার মনোনয়ন দিয়েছেন। তাঁরা উন্নয়নের নির্বাচন করবেন। উন্নয়ন দেখেই জনগণ তাঁকে ভোট দেবে।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সম্পর্কে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। যার যার মতো নির্বাচন করবেন।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেটলি প্রতীক পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান ভূঁইয়া। তিনি রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
শাহজাহান ভূঁইয়া তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ধরে সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর অত্যাচার, অবিচার ও অপশাসনে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা বঞ্চিত। তাঁরা হাইব্রিড দ্বারা শাসিত। আমাদের দলে যেন হাইব্রিড, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী না থাকে, সেটাই চাওয়া রূপগঞ্জবাসীর।’ তিনি বলেন, ‘আমি নৌকার বিরোধী না। নেত্রীর নির্দেশে আমি প্রার্থী হয়েছি। আগামী দিনে যাতে গোলাম দস্তগীর গাজী না থাকে। আমরা নৌকার পক্ষে, কিন্তু ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ব্যক্তির বিরুদ্ধে রূপগঞ্জের জনগণ আমাকে সমর্থন দিয়েছে। সেই লক্ষ্যে আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি।’
এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গাজী গোলাম মূর্তজা। তিনি ঈগল প্রতীক পেয়েছেন। এ ছাড়া ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম চেয়ার প্রতীক, জাকের পার্টির রূপগঞ্জ থানার সভাপতি জোবায়ের আলম গোলাপ ফুল, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক ও রূপগঞ্জ থানা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম লাঙ্গল, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও রূপগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান আলমারি প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির নেতা জয়নাল আবেদীন পেয়েছেন ট্রাক প্রতীক।