জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার একটি মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ পাঁচ ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার বগুড়া থেকে উদ্ধার করে গভীর রাতে তাদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, উদ্ধার হওয়া পাঁচ ছাত্রী ইউটিউবে দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যান্ড দল বিটিএসে আসক্ত হয়ে মাদ্রাসা থেকে পালায়। তারা ঢাকায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। বগুড়া থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গতকাল ভোরে ফজরের নামাজের পর মাদ্রাসার আবাসিকের পাঁচ ছাত্রীর খোঁজ পাচ্ছিল না কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক কামরুন্নাহার বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসায় ৫৫ জন ছাত্রী পড়াশোনা করে। এর মধ্যে ৫০ জন আবাসিক। গত বৃহস্পতিবার রাতে খাওয়াদাওয়ার পর তারা ঘুমিয়ে পড়ে। প্রতিদিনের মতো শুক্রবার ভোরে ফজরের নামাজের জন্য আবাসিকের তত্ত্বাবধায়ক দরজা খুলে দেন। এরপর ওই পাঁচ ছাত্রী বাইরে গিয়ে আর মাদ্রাসায় ফেরেনি। এরপর কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের বাসায় খোঁজ নিয়েও সন্ধান পায়নি। তাদের সবার বয়স ১০ থেকে ১২ বছর। এদের মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থীর ট্রাংক খুলে ভেতরে একটি করে চিরকুট পাওয়া যায়। একটি চিরকুটে লেখা ছিল, ‘প্রিয় মা-বাবা তোমাদের কষ্ট হচ্ছে। আমরা তোমাদের কষ্ট দিতে চাই না। এ কারণে চলে যাচ্ছি। আমরা আবার ফিরে আসব।’ এরপর পুলিশ ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের সন্ধান শুরু করে।
পুলিশ ও মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ ছাত্রীর মধ্যে একজনের কানের গয়না বিক্রি করে তারা ঢাকায় যাচ্ছিল। মাঝপথে গিয়ে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। পরে তারা জয়পুরহাটের উদ্দেশে যাত্রা করে গতকাল রাতে বগুড়ার মহাস্থানগড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছায়। খবর পেয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে উদ্ধার করে কালাই থানায় নিয়ে আসে। এরপর পুলিশ গভীর রাতে অভিভাবকদের থানায় ডেকে আনে। মুচলেকা নিয়ে পাঁচ ছাত্রীকে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়।
কালাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তোফায়েল আহাম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, মাদ্রাসা থেকে পালানো পাঁচ শিক্ষার্থী ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে ইউটিউবে দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যান্ড দল বিটিএসের ভিডিও দেখত। এতে তারা বিটিএসে আসক্ত হয়ে পড়ে। বিটিএসের ভিডিও দেখে তারা ঢাকায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তাদের উদ্ধার করে অভিভাবকদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার পর আজ শনিবার সকালে জয়পুরহাট সেনাবাহিনী ক্যাম্পের একটি দল ওই মাদ্রাসায় যায়। তারা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে। ভবিষ্যতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে জন্য উপস্থিত সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেয় তারা।
মাদ্রাসার পরিচালক ফিরোজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় যাওয়ার সময় বগুড়া থেকে নিখোঁজ পাঁচ ছাত্রীকে পাওয়া যায়। থানায় এনে তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।