বান্দরবানের নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণপিপাসুরা। আজ বিকেল ৪টায়
বান্দরবানের নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণপিপাসুরা। আজ বিকেল ৪টায়

বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর প্রাণ ফিরছে বান্দরবানের পর্যটনে

বান্দরবানের চার উপজেলায় ভ্রমণে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর জেলার পর্যটনশিল্পের প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে। এক সপ্তাহ ধরে এসব উপজেলায় পর্যটক সমাগম বেড়েছে। তবে বেশির ভাগ পর্যটকই রাত যাপনের পরিবর্তে দিনে এসে দিনে ফিরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা।

গত ৮ অক্টোবর বান্দরবান ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এরপর ৬ নভেম্বর জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে চার উপজেলায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে তিন উপজেলা রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে।

আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে জেলার বাসস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসা অনেক পর্যটক চাঁদের গাড়ির জন্য ভিড় করেছেন। এসব পর্যটকদেরই বেশির ভাগেরই গন্তব্য চিম্বুক ও নীলগিরি এলাকা। পরে জেলার শহরতলির পর্যটনকেন্দ্র নীলাচল, মেঘলা, শৈলপ্রপাতে গিয়েও দেখা যায় পর্যটকদের ভিড়। বান্দরবান জিপ-কার-মাইক্রোবাস স্টেশনের লাইনম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন, পর্যটনের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে পর্যটক বাড়ছে। গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ গাড়ি ভাড়া হচ্ছে তাঁদের। আজ শুক্রবার বেলা একটা পর্যন্ত ১১০টি গাড়ি চিম্বুক ও নীলগিরির উদ্দেশে পর্যটক নিয়ে রওনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শৈলপ্রপাতে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা তরুণ পর্যটক রুবেল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বান্দরবানের উঁচু পাহাড়, গহিন সবুজ বন তাঁর অনেক ভালো লাগে। তাই তাঁরা ১২ জন বন্ধুর একটি দল বান্দরবান ভ্রমণে এসেছেন। রুমা-থানচি যেতে না পেরে কিছুটা আক্ষেপ হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে আসা আবদুর রহমান নামের এক পর্যটক বলেন, তাঁরসহ চারটি পরিবার একত্রে পাহাড় দেখতে এসেছেন। শহরের একটি হোটেলে থেকে পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখছেন। আবীর হোসেন নামে আরেক পর্যটক বলেন, কক্সবাজারে সমুদ্র দেখে বান্দরবানের পাহাড় দেখতে এসেছেন। তাঁর মতে, হেমন্ত পাহাড় ভ্রমণে খুবই উপযুক্ত সময়। কারণ, শীতের শীতল হাওয়া অনেকের শরীরে সয় না।

সিয়ামপুই বম শৈলপ্রপাতে ফল বিক্রি করেন। তিনি জানান, গত তিন-চার দিনে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। তাই বেচাবিক্রিও ভালো হচ্ছে তাঁর। ডিসেম্বরে পর্যটক সমাগম আরও বাড়বে বলে জানান তিনি। একই এলাকায় কোমর তাঁতের কাপড় বিক্রেতা জুলি বম বলেন, গত মাসে পর্যটন বন্ধ থাকায় তাঁদের আয়রোজগারও বন্ধ ছিল। এখন পর্যটক আসায় তিনি অনেক খুশি। স্থানীয় লাইমিপাড়া ও ফারুকপাড়া বমরা অধিকাংশই পর্যটকদের ফলমূল, কাপড়চোপড় বিক্রির ওপর নির্ভরশীল বলে জানান জুলি বম।

জেলা হোটেলে-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন বলেন, পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও বেশির ভাগ পর্যটক দিনেই ফিরে যাচ্ছেন। খুব কম পর্যটক রাত যাপন করছেন। ডিসেম্বরে স্কুলশিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষ হলে পর্যটক সমাগম আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, রোয়াংছড়ি ও থানচির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে পর্যটকেরা আরও বেশি আকৃষ্ট হতেন। পর্যটক টানতে জেলার আবাসিক হোটেলগুলোতে ৩৫ শতাংশ এবং পরিবহনে ২০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর বান্দরবান সদর, লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় পর্যটকেরা নির্বিঘ্নে ঘুরতে পারছেন। তাই পর্যটক সমাগম বেড়েছে।