রূপগঞ্জে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়ি ও দোকানে হামলা–লুটপাট, আহত ৩

পৌরসভার কাঞ্চন খাঁপাড়া এলাকায় কাঞ্চন পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক মফিকুল ইসলামের বাড়িতে ভাংচুর চালানো হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কাঞ্চন পৌরসভা বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়িঘর–দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের তিন নেতা আহত হয়েছেন। আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কাঞ্চন পৌরসভা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বিএনপি নেতা–কর্মীদের অভিযোগ, কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল ও থানা আওয়ামী লীগের সদস্য এমায়েত হোসেনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের শতাধিক নেতা–কর্মী হামলায় অংশ নিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এক পক্ষ আরেক পক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে।

হামলায় আহত নেতা–কর্মীরা হলেন পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক সোহেল রানা, ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ও যুবদল কর্মী আলী হোসেন। এঁদের মধ্যে আলী হোসেনের পা কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আজ বিকেল চারটায় কাঞ্চন পৌরসভা বাজারে তাঁদের বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বেলা ১১টা থেকেই আওয়ামী লীগের লোকজন মোটরসাইকেলে করে দেশীয় অস্ত্রসহ বাজার এলাকায় মহড়া দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের লোকজন বিএনপির তিন সমর্থকের দোকানে তালা লাগিয়ে দেন। ঘটনার প্রতিবাদ করলে পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানাকে মারধর করা হয়। পরে কাঞ্চন পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক ও পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মফিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত কার্যালয় ও বাড়িঘরে ভাঙচুর করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মজিবুর রহমান ও কাঞ্চন পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল বাশার ওরফে বাদশার বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

হামলাকারীরা বাড়িতে থাকা প্রায় ১৪ ভরি সোনা ও নগদ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যান বলে দাবি করেন মফিকুল ইসলাম

আজ বেলা আড়াইটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার কাঞ্চন খাঁপাড়া এলাকায় মফিকুলের বাড়ির সামনের সড়কে রক্তের ছোপ পড়ে আছে। মফিকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির দোতলায় বিভিন্ন আসবাব ও ভাঙা কাচ ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। বাড়ির নারী ও শিশুরা কক্ষগুলোতে তালা লাগিয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

মফিকুল অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রসুলের অন্তত ১০ জন লোক তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়েছেন। বাড়িতে প্রবেশের সময় হামলাকারী ব্যক্তিরা তাঁর চাচাতো ভাই ও যুবদল কর্মী আলী হোসেনকে কুপিয়ে জখম করেছেন। পরে তাঁরা বাড়িঘর ভাঙচুর করে বাড়িতে থাকা প্রায় ১৪ ভরি সোনা ও নগদ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যান বলে দাবি করেন তিনি।

বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত মফিকুলের বাড়ির আশপাশে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। তবে এ সময় ঘটনাস্থলে কোনো পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুনেছি, তাঁদের (বিএনপির নেতা–কর্মী) বাড়িতে হামলা হয়েছে। কিন্তু নিশ্চিত নই। আমরা একটি অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ খেতে এসেছি।’

আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির নিজেদের কোন্দলে নিজেরাই একে অপরের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলার সঙ্গে জড়িত নন।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, লোকমুখে হামলা–ভাঙচুরের কথা শুনেছেন। তবে এ ব্যাপারে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ভাঙচুর ও লুটপাটের পর ওই এলাকায় পুলিশ কেন যায়নি—জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘যাঁদের বাড়িতে হামলার কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা তো কোনো অভিযোগ করেননি। পুলিশ পাঠিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এমনটা ঘটে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’