দুর্ঘটনা ভেবে লাশ দাফন, হত্যাকাণ্ড সন্দেহে ৪ মাস পর উত্তোলন

লাশ
প্রতীকী ছবি

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় চার মাস আগে মৃত্যু হয় গ্যাসফিল্ডের কর্মকর্তা ময়নুল হোসেন ওরফে আয়ানীর (৫৫)। সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ভেবে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করেছিল পরিবার। তবে এ ঘটনায় একটি মামলা করে পরিবার দাবি করেছে, ময়নুলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে গতকাল রোববার ময়নুলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তোলা হয়েছে।

ময়নুল হোসেন সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেডের উপব্যবস্থাপক পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের উমনপুর গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল দুপুরে সিলেটের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে তাঁর লাশ কবর থেকে তোলা হয়।

গত ১৩ জুন রাত ১১টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে জৈন্তাপুর উপজেলার ৬ নম্বর চিকনাগুলের উমনপুরের (গ্যাসফিল্ড ৮ নম্বর কূপ) সামনে ময়নুল হোসেন নিহত হন। সে সময় সড়ক দুর্ঘটনা সন্দেহে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফন করা হয়েছিল। সড়ক পরিবহন আইনে তামাবিল হাইওয়ে থানায় একটি মামলাও হয়। তবে মামলা তদন্ত করে পরে পুলিশ এটি দুর্ঘটনা নয় বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়।

পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুরে নিহত ব্যক্তির লাশ উত্তোলনের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ আরও জানায়, নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে গত ৭ জুলাই আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করা হয়। আদালত গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটি রেকর্ড করতে আদেশ দেন। আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ অক্টোবর জৈন্তাপুর থানায় মামলা রেকর্ড হয়।

নিহত ব্যক্তির ভাই নাজমুল হোসেইন এমদাদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এজাহারে বলা হয়, গত ১৩ জুন প্রাতিষ্ঠানিক কাজ শেষে রাত মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন ময়নুল হোসেন। পথে সিলেট গ্যাসফিল্ড লিমিটেডের ৮ নম্বর কূপের সামনে একটি পিকআপ দিয়ে তাঁর মোটরসাইকেলের গতিরোধ করা হয়। এ সময় হামলাকারীরা রড বা পাইপ দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে ময়নুলকে হত্যা করে। পরে সড়কে পড়ে থাকা ময়নুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শুরুতে স্বজনদের ধারণা ছিল এটি দুর্ঘটনা। কিন্তু মরদেহে বিভিন্ন ধরনের আঘাতের চিহ্ন থাকায় তাঁদের সন্দেহ দানা বাঁধে। গত ২৮ জুন বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মসজিদে গ্রামের মানুষ সম্মিলিত আলোচনায় বসেন। সেখানে এক আসামি নিজের ‘অপরাধবোধ’ থেকে ময়নুলকে কীভাবে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা স্বীকার করেন।

নিহত ব্যক্তির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজাদ খান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়ির লিচু চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে। গত ২৫ মে লিচু চুরির ঘটনা নিয়ে সালিস বৈঠক হয়। সেখানে জোরালো ভূমিকা রাখেন ময়নুল হোসেন। এতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে তাঁকে ‍খুন করেন।

জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসফিল্ড কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনায় হওয়া মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।