বাগেরহাটে জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতির নেতৃত্বে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। আজ রোববার সকালে এ ঘটনা ঘটে। প্রায় একই সময়ে বাগেরহাট পৌরসভাতেও অবস্থান নিয়েছিলেন একদল লোক। তবে সেখানে তাঁরা মেয়রের খোঁজ করলেও ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ফকির তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল লোক উপজেলা পরিষদে প্রবেশ করেন। তাঁরা উপজেলা চেয়ারম্যানের কক্ষে ঢুকে টেবিল–চেয়ার ভাঙচুর করেন। তাঁরা সেখানে থাকা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধানের ছবিসহ বিভিন্ন নেতা–কর্মীদের ছবি ও বেশ কিছু দাপ্তরিক ফাইল বাইরে নিয়ে আসেন। পরে পরিষদের সামনের সড়কের ওপর সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি চেয়ারম্যানের কক্ষেও তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা।
উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপস্থিত নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ফকির তারিকুল ইসলাম। ওই বক্তব্যের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বক্তব্যে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘বাংলাদেশের মানুষকে ন্যায়ভিত্তিক সেবা দেওয়ার জন্য আপনারা প্রস্তুত থাকেন।...উপজেলার বিনা ভোটের সন্ত্রাসী চেয়ারম্যান...যেখানে পাবেন গণধোলাই দেওয়া হবে। (সদর উপজেলার) ১০ ইউনিয়নের যে সন্ত্রাসী চেয়ারম্যান, যারা আমাদের নেতা–কর্মী, সাধারণ মানুষকে থানা–পুলিশে সোপর্দ করে মিথ্যা মামলায় এলাকার সমস্ত মানুষকে জ্বালায়ে অতিষ্ঠ করেছে, তাদের যেখানে পাবেন গ্রেপ্তার করে মারপিট করে আইনের হাতে সোপর্দ করবেন। এ দেশে তাদের স্থান নেই। দেখে না গণভবনের কী অবস্থা...’ এ সময় আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যানদের প্রতিহত করার নির্দেশ দিয়ে তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেখানে পাবেন গণধোলাই দেবেন।’
এদিকে দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে আসেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। এ সময় ওই নেতাদের সঙ্গে থাকা কয়েকজন কর্মী প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে মুজিব শতবর্ষের লোগো থাকা ফলক ও করিডরে থাকা বেশ কিছু ছবি ভাঙচুর করে বাইরে ফেলে দেন।
সেখানে উপস্থিত এক সাংবাদিক বলেন, বেলা একটার দিকে বিএনপির নেতারাসহ শতাধিক লোক প্রেসক্লাবে আসেন। এ সময় প্রেসক্লাব ভবনের দোতলায় ঢুকে করিডর দিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন সময়ের ছবি ভাঙচুর শুরু করেন। তাঁরা প্রেসক্লাব ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ছবি, উদ্বোধন, বিদেশ সফর ও অনুদান প্রদানকারীদের ছবি ও সভাপতি-সম্পাদকের নামফলক ভাঙচুর করেন। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকেরা প্রতিবাদও জানান।
এদিকে সকাল থেকে বিএনপির বেশ কিছু নেতা–কর্মী পৌর মেয়র খান হাবিবুর রহমানের খোঁজে বাগেরহাট পৌরসভায় অবস্থান নেন। তবে তাঁরা কোনো ভাঙচুর করেননি। তবে মেয়রের কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করেন বলে জানা যায়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন বলেন, উসকানিমূলক যে বক্তব্যটি এসেছে, সেটি ওই ব্যক্তির নিজের। দলীয়ভাবে এমন বক্তব্যের কোনো সুযোগ নেই। এই বক্তব্যের দায় দল নেবে না। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের ঘটনায় হামলার যথাযথ প্রমাণ ছবি, ভিডিও থাকলে সেটি কেন্দ্রে (বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি) পাঠিয়ে অবগত করবেন বলে জানান তিনি। প্রেসক্লাবের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সমাধান দুপুরেই হয়েছে বলেও যোগ করেন তিনি।