কক্সবাজারে বাসে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়, পর্যটকসহ যাত্রীদের অসন্তোষ

জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত নতুন ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ১০০ থেকে ১৮০ টাকা বেশি আদায় করা হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার সকালে শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে
ছবি: প্রথম আলো

সকাল সাড়ে নয়টা। কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের বাইরে সড়কে তখন ইউনিক, মারসা, পূরবীসহ বিভিন্ন পরিবহনের একাধিক গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। বেশির ভাগ যাত্রীর গন্তব্য চকরিয়া ও চট্টগ্রাম। বাসের কর্মচারীরা সেখানে দাঁড়িয়ে হাঁকডাক দিয়ে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। এ সময় সালামত উল্লাহ নামের এক যাত্রী চট্টগ্রামগামী মারসা পরিবহনে উঠতে চাইলেন।

সালামত উল্লাহর উদ্দেশে চালকের সহকারী হেলাল উদ্দিন বললেন, ‘ভাড়া ৪২০ টিয়া (টাকা) লাগিব।’ সালামত জেলা প্রশাসন নির্ধারিত ৩৩২ টাকার কথা বললে হেলাল সেটা মানতে রাজি নন। একপর্যায়ে ভাড়া নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় হেলাল বলেন, ‘সারলে (পোষালে) গাড়িত উঠো, ন সারলে (না পোষালে) অন্য পথ ধরো। তোয়ারে জোর গরি গাড়িত উড়িবল্যাই হনে হইয়ে।’

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পর থেকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম, কক্সবাজার-ঢাকা, কক্সবাজার-টেকনাফসহ জেলার অভ্যন্তরে ১১টির সড়কপথে চলাচলকারী গণপরিবহনের নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ওই ভাড়ার তালিকা কোথাও মানা হচ্ছে না বলে যাত্রীরা অভিযোগ করছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, কলাতলী, সুগন্ধা পয়েন্ট, হোটেল–মোটেল জোনসহ বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার অন্তত ৪০টি কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত নতুন ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ১০০ থেকে ১৮০ টাকা বেশি আদায় করা হচ্ছে। এতে ভাড়া নিয়ে পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে যাত্রীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

গতকাল বুধবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে পরিবহনমালিক, পরিবহনশ্রমিক–নেতা ও বিআরটিএর সঙ্গে যৌথ বৈঠক করে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন। নতুন ভাড়ার প্রজ্ঞাপন জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কোনো রুটে ভাড়ার তালিকা মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে, সকালে ও রাতে যাত্রীর চাপ বাড়লে কাউন্টারগুলোয় ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

সকালে ও রাতে যাত্রীর চাপ বাড়লে কাউন্টারগুলোয় ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা

জেলা প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩২ টাকা। তবে সেখানে যাত্রীদের কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। কক্সবাজার থেকে ঢাকা রুটে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকা। এই রুটে গড়ে ১০০ টাকা বেশি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে এস আলম পরিবহনের পরিচালক মো. আলম বলেন, প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যেই তাঁরা ভাড়া আদায় করছেন। তবে কিছু কিছু পরিবহনের কর্মচারীরা মাঝপথে ওঠা যাত্রীদের কাছ থেকে ১০ থেকে ৫০ টাকা বেশি আদায় করছেন।

আন্তজেলা সড়ক পরিবহনশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, কিছু বাসচালক ও চালকের সহকারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ আসছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে একদফা ভাড়া বেড়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাড়ার নতুন যে তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা শতভাগ কার্যকর করতে কয়েক দিন সময় লাগবে। তবে দু–এক দিনের মধ্যে ভাড়ার বিষয়ে বিশৃঙ্খলা আর থাকবে না বলে আশা করছেন তিনি।

নতুন ভাড়া কার্যকরের বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, গতকালের বৈঠকে পরিবহনসংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে, ভাড়া নিয়ে কেউ অরাজকতা করলে ছাড় দেওয়া হবে না। ভাড়ার বিষয়টি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।