সুন্দরবনের আমোরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় লাগা আগুন পুরোপুরি নিভেছে। পুড়ে যাওয়া বনভূমিতে জমেছে জোয়ার ও বৃষ্টির পানি। প্রাথমিকভাবে জিপিএসের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বনভূমির পরিমাণ নিরূপণের চেষ্টা করেছে বন বিভাগ। প্রাথমিকভাবে আগুনে ৭ দশমিক ৯৮ একর বনভূমি আক্রান্ত ও সাড়ে ৫ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দিনব্যাপী ওই এলাকা পর্যবেক্ষণ করে আগুন বা ধোঁয়ার কোনো অস্তিত্ব পায়নি ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগ। তবে অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য আরও ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম।
গত শনিবার সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধারা স্টেশনের আমোরবুনিয়া এলাকায় আগুন লাগার খবর আসে। এরপর আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে বন বিভাগ, কমিউনিটি প্যাট্রলিং গ্রুপ (সিপিজি), ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি), টাইগার টিমসহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ও বনজীবীরা। তবে ঘটনাস্থল থেকে পানির উৎস দূরে হওয়ায় এবং দুর্গম পথের কারণে প্রথম দিন পানি ছিটানো সম্ভব হয়নি।
গত রোববার ভোর থেকে সমন্বিতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেয় নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বন বিভাগের নিজস্ব ফায়ার ইউনিটসহ স্থানীয় তিন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক। গতকাল সোমবার দুপুরের আগে আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে সতর্কতার জন্য বন বিভাগের ফায়ার ইউনিট বনে আগুন ও ধোঁয়ার সন্ধান চালিয়ে যায়। এরপর গতকাল সন্ধ্যায় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। রাতভর বৃষ্টি ও সকালে অমাবস্যার জোয়ারে পানি জমে ক্ষতিগ্রস্ত বনভূমিতে।
আজ দিনব্যাপী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আগুন ও ধোঁয়ার আর কোনো অস্তিত্ব না পেয়ে সন্ধ্যায় আগুন সম্পূর্ণ নিভে গেছে বলে জানায় বন বিভাগ। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, গতকালের বৃষ্টি ও অমাবস্যার জোয়ারে বনের আগুন লাগা স্থানে পানি ঢুকেছে। এখন আর বনের মধ্যে কোথাও আগুনের অস্তিত্ব নেই। এরপরও তাঁরা আগামী ২৪ ঘণ্টা ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করবেন।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, আগুন লাগার স্থান ড্রোনের মাধ্যমে আবার মনিটরিং করা হয়েছে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ড্রোনের মাধ্যমে মনিটরিং করেও বনভূমির কোথাও আগুনের আলামত পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া পায়ে হেঁটে বনের মধ্যে একাধিক দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কোথাও আগুনের দেখা মেলেনি। আগুন লাগা জায়গায় বৃষ্টি হওয়ায় কোথাও কোথাও পানি জমেছে। সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনায় সুন্দরবনের মুনিয়া ক্যাম্পের আওতাধীন বনাঞ্চলের আগুন নিভে গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মিহির কুমার দো আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জিপিএসের মাধ্যমে আমরা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা নিরূপণের চেষ্টা করেছি। আগুনে ৭ দশমিক ৯৮ একর বনভূমি আক্রান্ত ও সাড়ে ৫ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।’