রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ও ডুমুরিয়ায় নির্মিত ৭৫টি জলকপাটের মধ্যে ২৩টি অকেজো হয়ে গেছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় ৭৫টি জলকপাট রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে এর ৭২ শতাংশই কোনো কাজে আসছে না। যেগুলো ভালো আছে সেগুলো দিয়েও ভালোভাবে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।
এ কারণে এবারের অতি বৃষ্টিতে তলিয়ে আছে ডুমুরিয়া, ফুলতলা ও বটিয়াঘাটা উপজেলার শতাধিক গ্রাম। এতে বাড়ির আশপাশ ও সড়ক ডুবে থাকায় এসব গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক ও ঘেরমালিকেরা জানান, অতি বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ঘেরের শতকোটি টাকার মাছ। এ ছাড়া কৃষকদের ১ হাজার ৪৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে ১১টি নদ-নদী বয়ে গেছে। এসব নদীর সঙ্গে খালের মুখগুলোয় ৭৫টি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে জলকপাটগুলোর (স্লুইসগেট) ২৩টি একেবারে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ১১টি আংশিক কাজ করে। আর ২০টির মতো জলকপাটের মুখ পলি জমে ভরাট হয়ে আছে। বাকি ২১টি জলকপাট সচল থাকলেও এলাকায় অতি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায়, সেগুলো খুব একটা কাজে আসছে না।
খুলনা আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর আগস্ট মাসে বৃষ্টি হয়েছে ২৬৮ মিলিমিটার। আর চলতি সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি হয়েছে ৩৯৯ মিলিমিটার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে গত ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৫৪ মিলিমিটার।
ডুমুরিয়া উপজেলার সবচেয়ে বড় ১০টি জলকপাট রয়েছে আপার শৈলমারী নদীর মুখে। এটি শৈলমারী স্লুইসগেট হিসেবে পরিচিত। ডুমুরিয়া উপজেলার বৃষ্টির পানির একটি বড় অংশ নিষ্কাশিত হয় এই জলকপাট দিয়ে। জলকপাটের একপাশে বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের উত্তর শৈলমারী গ্রাম, অন্য পাশে ডুমুরিয়ার গুটুদিয়া ইউনিয়নের টিয়াবুনিয়া গ্রাম।
গত সোমবার সকাল ৯টার দিকে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জলকপাটের প্রায় ৫০ মিটার দূর দিয়ে পূর্ব-পশ্চিম দিকে চলে গেছে শৈলমারী নদী। নদী থেকে উত্তর দিকে একটি খাল এসে মিশেছে জলকপাটের সঙ্গে। খালটি পলি জমে একেবারে ভরাট হয়ে আছে। এতটাই পলি জমেছে যে কপাটগুলো পলিতে ঢেকে আছে। এ সময় কথা হয় বটিয়াঘাটার উত্তর শৈলমারী গ্রামের বাদল হালদারের সঙ্গে। তাঁর বাড়ির উঠানে হাঁটুসমান পানি। ঘরের মধ্যেও পানি ঢুকেছে।
অতি বৃষ্টির কারণে আমন ধানের চারা বেশ কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানালেন বাদল হালদার। তিনি বলেন, ১০ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলেন। তিনবার জমিতে চারা রোপণ করেও তা রাখতে পারেননি। তাঁর জমিতে এখন কোমরসমান পানি। কয়েক দিন আগের অতি বৃষ্টিতে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
পাশেই ছিলেন ঘোলা জয়খালী গ্রামের মাজেদ সরদার। ২০ বছর ধরে ওই গ্রামে বসবাস করছেন তিনি। কিন্তু এর আগে কখনো এমন জলাবদ্ধতা দেখেননি। রান্নাঘরের মধ্যে হাঁটুপানি। ঘরের খাটের ওপর চুলা তৈরি করে রান্না করতে হচ্ছে তাঁদের।
ডুমুরিয়া উপজেলাটি পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ-১–এর আওতায়। ওই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহমান তাজকিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জলকপাট দিয়ে পানি সরতে না পারায় এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। যেসব জলকপাটের সামনের অংশ পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে, সেগুলো সচল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
খুলনার ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ডুমুরিয়া উপজেলা। ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত উপজেলাটি। আর গ্রামের সংখ্যা ২৩৭টি। অতি বৃষ্টিতে উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নেই কমবেশি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা রয়েছে গুটুদিয়া, রংপুর, খর্ণিয়া, রঘুনাথপুর, ধামালিয়া, আটলিয়া ও মাগুরাঘোনা ইউনিয়নে। এসব ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম এখন পানিতে তলিয়ে আছে। ফলে দুর্বিষহ জীবন পার করছে এসব গ্রামের মানুষ। থাকার জায়গা নেই, রান্না করার জায়গা নেই, নেই স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার। পুকুর, মাছের ঘের, ফসলের খেত—সবই তলিয়ে আছে।