চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ

চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধের দাবিতে যানবাহন চালকেরা একত্রিত হয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। শনিবার দুপুরে চাঁদপুর–ফরিদগঞ্জ সড়কের গাছতলা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

চাঁদপুর সেতুতে মোটরসাইকেলে নতুন করে ৫ টাকা করে টোল চালু করায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। এই সেতুতে গত ৫ বছর মোটরসাইকেল থেকে কোনো টোল আদায় করা হয়নি। মোটরসাইকেলের জন্য নতুন করে টোল চালু করায় গত সোমবার থেকে চাঁদপুরের বাইকাররা এ আন্দোলন শুরু করেন। আজ শনিবার সাধারণ যানবাহনের চালকেরা একত্র হয়ে চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ সড়কের গাছতলা এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন।

বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। পরে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে নিলে দেড় ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ক্ষুব্ধ মোটরসাইকেলচালক নাজমুল হাসান বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে এই সেতুর টোল আদায় বন্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন এলাকাবাসী। এ নিয়ে জাতীয় সংসদেও একাধিকবার টোল বন্ধের দাবি তুলে প্রস্তাব করা হয়, কিন্তু তা বন্ধ না করায় সবাই বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।

চাঁদপুর সেতুতে গত ৫ বছর মোটরসাইকেল থেকে কোনো টোল আদায় করা হয়নি। মোটরসাইকেলের জন্য নতুন করে টোল চালু করায় চাঁদপুরের বাইকাররা বিক্ষোভ করেন। শনিবার দুপুরে

চাঁদপুর সিএনজি অটোরিকশা সমিতির সভাপতি আবুল বাশার বলেন, ‘আমরা এই সেতুতে প্রায় ১৯ বছর ধরে টোল দিয়ে আসছি। এতে অনেকে এই সেতু দিয়ে একাধিকবার যাতায়াত করায় প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা টোল দিয়ে আসছেন। ফলে অনেক চালক টোল দিতে গিয়ে লোকসান গুনছেন। আমরা বারবার এই টোল বন্ধের দাবি করলেও তা বন্ধ হচ্ছে না।’

আন্দোলনকারীরা জানান, ২০০৫ সালে চাঁদপুর সদর উপজেলার গাছতলা এলাকায় ডাকাতিয়া নদীর ওপর চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে ১৮ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় চাঁদপুর সেতু। ২০০৫ সালের ১৭ মার্চ এই সেতুর উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ২৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন ছোট, বড় ও মাঝারি ধরনের কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। প্রতিবার সেতু ব্যবহার করার সময় টোল দিতে হয় যানবাহনের চালকদের। এতে দেখা গেছে, দীর্ঘ ১৯ বছরে সেতু নির্মাণব্যয়ের দ্বিগুণ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হলেও বন্ধ হয়নি টোল আদায়। এতে যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে বেকায়দায়।

চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধের দাবিতে যানবাহন চালকেরা মানববন্ধন করেন। শনিবার দুপুরে চাঁদপুর–ফরিদগঞ্জ সড়কের গাছতলা এলাকায়

প্রতিদিন চাঁদপুর সেতু দিয়ে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। টোল আদায় বন্ধ না হওয়ায় গাড়ির চালকেরা এসব যাত্রীর কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মারুফ হোসেন বলেন, এই সেতুতে টোল আদায়ে এবারও তিন বছরের ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা টোল না দেওয়ার পক্ষে আন্দোলন করলেও তাঁরা কোনো প্রকার স্মারকলিপি বা চিঠি দেননি। তবে এর আগে চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম শামছুল হক ভূঁইয়া টোল বন্ধের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। মোটরসাইকেল থেকে ৫ টাকা করে টোল আদায়ের বিষয়ে মারুফ হোসেন বলেন, গত ৫ বছর কেন মোটরসাইকেল থেকে টোল আদায় করেননি এবং এখন কেন মোটরসাইকেল থেকে টোল আদায় করছেন এই ব্যাখ্যা ইজারাদাররা দেবেন।

ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. কাকন বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী চাঁদপুর সেতুতে টোল আদায় করা হচ্ছে। টোল আদায়ে রসিদ না দেওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন শত শত সিএনজিচালিত অটোরিকশা যাতায়াত করে। এত দ্রুত সবাইকে রসিদ দেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু আমরা বড় যানবাহনগুলোতে রসিদ দিয়ে থাকি।’

মোটরসাইকেল টোল আদায়ের বিষয়ে মো. কাকন বলেন, ‘গত ৫ বছর মোটরসাইকেল থেকে কোনো টোল আদায় করা হয়নি। এতে আমাদের ক্ষতি হয়েছে। এখন সরকার থেকে মোটরসাইকেলের টোল আদায়ের জন্য আমাদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাই মোটরসাইকেল থেকে ৫ টাকা করে টোল আদায় করা হচ্ছে।’