বিএনপির ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ রূপরেখা নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় বক্তব্য দেন তারেক রহমান
বিএনপির ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ রূপরেখা নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় বক্তব্য দেন তারেক রহমান

আমরা রাজনীতি করি, ভোটের কথা বলব, এটাই স্বাভাবিক: তারেক রহমান

রাজনীতিবিদেরা ভোটেরা কথা বলবেন, এটাই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘অনেকে বলেন আমরা শুধু ভোটের কথা বলি। আমরা রাজনীতি করি, আমরা ভোটের কথা বলব, এটাই স্বাভাবিক।’

আজ বুধবার বিএনপির ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ রূপরেখা নিয়ে দুই মহানগর ও এক জেলার নেতাদের জন্য আয়োজিত কর্মশালায় তারেক রহমান এ কথা বলেন।  গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর এবং টাঙ্গাইলে পৃথকভাবে আয়োজিত কর্মশালায় তিন হাজারের মতো নেতা-কর্মী অংশ নেন। প্রধান অতিথি হিসেবে তারেক রহমান একই সঙ্গে তিন স্থানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।

বিএনপি নেতা তারেক রহমান বলেন, ‘আগামী নির্বাচন একটি কঠিন নির্বাচন হবে। আগামী নির্বাচন করেই কি আমরা ক্ষান্ত দিয়ে দেব? না, আমরা আগামী নির্বাচন করে পরের নির্বাচনের জন্য কাজ করব।’

এখন কথায় চিড়া ভিজবে না উল্লেখ করে কর্মশালায় নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনাকে কাজ করে প্রমাণ করতে হবে, জনগণকে বোঝাতে হবে। নির্বাচনের পর আবার আপনাকে সেসবের প্রমাণ দিতে হবে। আমরা যদি জনগণের সামনে প্রমাণ করেতে পারি সমস্যা ছিল, অনেক কিছু সমাধান করেছি এবং আমরা চেষ্টা করছি; সে ক্ষেত্রে হয়তো জনগণ আমাদের কথা চিন্তা করবে।’

নারায়ণগঞ্জ শহরের মিশনপাড়া এলাকায় আয়োজিত কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের একাংশ

‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ স্লোগানের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বৈরাচার যখন এই দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা অস্ত্রের জোরে ধরে রেখেছিল, তখন একটি স্লোগান আমি আপনাদের সামনে দিয়েছিলাম। সেটি হচ্ছে “টেক ব্যাক বাংলাদেশ”। এর অর্থ ছিল জনগণের রাজনৈতিক অধিকার, মৌলিক অধিকার, বাক্‌স্বাধীনতা এবং নিজস্ব অর্থনৈতিক অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে আনা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা, রাজনীতি, বিচারব্যবস্থা, যা–ই বলি না কেন, সেগুলোতে দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশের প্রথম যে অধ্যায়টা ছিল অর্থাৎ স্বৈরাচারের পতন অথবা স্বৈরাচারের পলায়ন। দেশের মানুষের সমর্থনে এবং সহযোগিতায় দেশের গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলো সবাই মিলে সেই প্রথম অধ্যায়টি অর্জন করতে পেরেছি। স্বৈরাচারের শুধু পতনই করিনি, এই স্বৈরাচারের যে মাথা ছিল, সে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।’

টাঙ্গাইল শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে আয়োজিত কর্মশালায় বিএনপি নেতারা

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘যারা শুধু নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য ভিনদেশের প্রভুকে খুশি করার জন্য দেশটাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সেটি অর্থনৈতিকভাবে হোক, প্রশাসনিকভাবে হোক, দেশের শিল্প, ব্যবসা–বাণিজ্য, দেশের ঐতিহ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা—সবকিছুকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ অধম হলেও আমরা অধম হব না। আমরা আমাদের ৩১ দফা সফল করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের গত ১৫-১৬ বছরের গুম, খুনসহ সব জুলুম-অত্যাচারের জবাব দেব। এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বাংলাদেশ নিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।’

দলের দুষ্ট লোকদের ‘টাইট’ দিয়ে রাখার জন্য নেতা–কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘কিছুসংখ্যক লোক নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের কষ্টে পানি ঢেলে দিচ্ছে। পরিবারে দুষ্ট লোক থাকলে তাঁদের একটু টাইট দিয়ে রাখতে হয়, যেন পাশের বাড়ির আমগাছটায় ঢিল না মারে। আমাদের দলের ভেতরেও এমন দুষ্ট থাকতে পারে। এদের টাইট দিয়ে রাখতে হবে। এরা বুঝে হোক না বুঝে হোক, দলের ক্ষতি করে ফেলছে।’

গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে আয়োজিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আনিসুর রহমান তালুকদারের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। প্রধান আলোচক ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মাহাদী আমিন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, মাজহারুল আলম, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল করিম প্রমুখ।

টাঙ্গাইল শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে আয়োজিত কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন (টুকু)। প্রস্তাবিত ৩১ দফার নানা দিক তুলে ধরে আলোচনা করেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর। জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ, সহসাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সাঈদ সোরহাব, সহ–প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রেহেনা আক্তার, কার্যনির্বাহী সদস্য ওবায়দুল হক, বীথিকা বিনতে হোসাইন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল প্রমুখ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আতিকুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (কেন্দ্রীয় দপ্তরে সংযুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল, গাজীপুর প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ]