উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে হুমকির অভিযোগে মেহেরপুর-১ (মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানকে আবার কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় মেহেরপুরের দায়রা জজ আদালতের যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির মেহেরপুর-১ আসনের সভাপতি মো. কবির হোসেন তাঁকে এ নোটিশ পাঠান। আগামী বুধবার সশরীর অথবা তাঁর প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কার্যালয়ে হাজির হয়ে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নোটিশ সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান ফোন করে মেহেরপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অলোক কুমার দাশকে হুমকি দিয়েছেন। এর একটি রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম শাহিন নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটিকে লিখিত অভিযোগ দেন।
১ মিনিট ২ সেকেন্ডের অডিওতে আবদুল মান্নান অলোক কুমারকে বলেন, ‘তুমি অলোক কুমার দাশ, বাইরে থেকে এসে বাড়িঘর তৈরি করে খুব আরামেই আছ। পয়সা অনেক কামাই করেছ। আমি কিন্তু যেমন ভালো লোক, তেমন খারাপ লোক। তোমাকে কোনো মন্ত্রী প্রমোশন দেয়নি। বাংলাদেশ সরকার তোমার প্রমোশন করে দিয়েছে।
মন্ত্রীকে (জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন) ভোট দেওয়ার ব্যাপারে যদি আর একটা কথা শুনি, তাহলে আমি এমপি হই আর না হই, তোমার মেহেরপুরের বাসা আমি উঠিয়ে দেব। আর তুমি যদি সাবধান হয়ে যাও, তাহলে আমার প্রিয়পাত্র হয়ে থাকবে। এসব কথা তুমি পারলে তোমার মন্ত্রীকে বলো...। আমি হারার জন্য আসিনি। সাবধান হয়ে যাও তুমি।’
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অলোক কুমার দাশ জানান, তাঁর ফোনে অটোকল রেকর্ডিং হয়। ১৭ ডিসেম্বর আবদুল মান্নান তাঁকে ফোনে হুমকি দেন। এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখান। বিষয়টি তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে জানিয়েছেন। অডিওটি তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। এরপর দেখেন, তা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিমন্ত্রী জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম হোসেনকে বিষয়টি জানান। রিটার্নিং কর্মকর্তা অডিওটি মেহেরপুরের দায়রা জজ আদালতের যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি মো. কবির হোসেনকে দিয়েছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ১১ ধারায়, উসকানিমূলক বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান, উচ্ছৃঙ্খল আচরণসংক্রান্ত বিধিনিষেধ রয়েছে। ধারার (ক)–এ বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য প্রধান বা কোনো ধরনের তিক্ত বা উসকানিমূলক বা মানহানিকর কিংবা লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না।
অধ্যাপক আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগের হয়ে ১৯৯১-৯৬ ও ১৯৯৯-২০০১ মেয়াদে মেহেরপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন, জাতীয় পার্টির আবদুল হামিদ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বাবুল জাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির তরিকুল ইসলাম।
প্রতীক বরাদ্দের আগে একাধিকবার নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন আবদুল মান্নান। প্রতীক বরাদ্দের আগে সদর উপজেলার আমঝুপিবাজারে সিরাজ হোসেনের কীটনাশক ও সারের দোকানের সামনে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান। এ ছাড়া ৬ ডিসেম্বর সদর উপজেলার আশরাফপুর জনকল্যাণ ক্লাব ও হঠাৎপাড়ার জহিরের দোকানের সামনে নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেন তিনি, যা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম শাহীন নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিতে একটি অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে প্রতিনিধি পাঠিয়ে আগামী দিনে আর আচরণবিধি ভঙ্গ হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আব্দুল মান্নান।