ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করলেও তার প্রভাবে সাতক্ষীরায় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো বাতাসে উপকূলীয় এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ি পড়ে গেছে। অতিবর্ষণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় চিংড়িঘের তলিয়ে গেছে। উপড়ে ও ভেঙে পড়ছে গাছগাছালি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শ্যামনগর এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন বলছে, ঘূর্ণিঝড়ে জেলার ৭৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪৩টি ইউনিয়নে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১ হাজার ১৯২টি ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ২৭৬টি ঘরবাড়ি। মারা গেছেন একজন।
সাতক্ষীরা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জুলফিকার আলী বলেন, সুন্দরবন এলাকায় কতটা বৃষ্টি হয়েছে, তা রের্কড করার মতো প্রযুক্তি তাঁদের নেই। তবে সাতক্ষীরা শহরে রোববার বেলা তিনটা থেকে সোমবার বেলা তিনটা পর্যন্ত ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটাকে অতিভারী বর্ষণ বলা হয়ে থাকে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়। রোববার দুপুরের দিকে দমকা বাতাসের সঙ্গে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। চলে দিবাগত রাত তিনটা পর্যন্ত। তারপর বাতাস ও বৃষ্টি কিছুটা কমলেও আবার আজ সোমবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে দমকা বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়। সন্ধ্যায় প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল।
সরেজমিনে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী, আঠুলিয়া, মুন্সিগঞ্জ কৈখালী রমজাননগর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে কিংবা উপচে লোকালয়ে পানি ঢোকেনি। তবে অতিবর্ষণে বাড়ির আঙিনায় ২-৩ ফুট পানি জমেছে। আঠুলিয়া ও কালীগঞ্জের ঋষিপাড়ায় অনেকগুলো কাঁচা ঘরবাড়ি পড়ে গেছে। শ্যামনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় চিংড়িঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। শ্যামনগর থেকে সাতক্ষীরাগামী সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় গাছ উপড়ে অথবা ডাল ভেঙে পড়েছে।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালি গ্রামের রমজান আলী জানান, চুনা নদীর পানি ৪-৫ ফুট বেড়ে ঢেউ আছড়ে পড়ছে বেড়িবাঁধের ওপর। বাড়ির লোকজনকে রোববার সন্ধ্যায় আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি ঘরের মধ্যে হাত-পা গুটিয়ে বসেছিলেন। রাতে হঠাৎ ঘরটি ভেঙে পড়ে। দ্রুত ঘর থেকে বাইরে চলে আসেন। সকালে দেখেন শুধু তাঁর নয়, অনেকের ঘর ভেঙে পড়েছে। আঠুলিয়া ইউনিয়নের বিড়ালক্ষ্মী গ্রামের আবুল কালাম জানান, দমকা বাতাসের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ধরে বৃষ্টি হওয়ায় তাঁদের কাঁচা ঘরবাড়ি নড়বড়ে হয়ে পড়ে। রোববার রাতে দমকা বাতাসে তার ঘরসহ পাড়ার অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি পড়ে গেছে।
বুড়িগোয়ালিনীর দুর্গাবাটি গ্রামের রনজিৎ মন্ডল জানান, অতিবৃষ্টিতে তাঁর চিংড়িঘেরসহ অসংখ্য ঘের ভেসে একাকার হয়ে গেছে। অনেকে ঋণ নিয়ে মৎস্য চাষ করেছিলেন। এখন তাঁদের কী হবে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা-১ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বলেন, তাঁর আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কোথায় পানি উপচে লোকালয় ঢোকেনি। দুর্গাবাটি, লেবুবুনিয়া, খলিশাখালী, হরিষখালীসহ কয়েকটি এলাকার বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ওই সব স্থান বালু ও মাটির বস্তা দিয়ে মেরামত করা হয়।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করলেও প্রবল বেগে ঝড় ও বৃষ্টি হচ্ছে। দুর্যোগ না কমলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে শ্যামনগর ও আশাশুনিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৪৬৮টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতিবর্ষণে দু-তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। একজন বৃদ্ধা পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহযোগিতার জন্য ইতিমধ্যে শাড়ি, লুঙ্গি, শুকনো খাবার ও টাকা চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।