নোয়াখালীতে বিএনপির পদযাত্রাকে ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় দলটির ২০২ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে তিন থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলার এজাহারে ৪২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, অন্যদের অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। তিন মামলায় পুলিশ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গতকাল শনিবার রাতে সেনবাগ, বেগমগঞ্জ ও সুধারাম (সদর) থানায় মামলাগুলো করা হয়। এর মধ্যে সেনবাগ থানায় দায়ের হওয়া মামলার বাদী পুলিশ। আর বাকি দুটি মামলার বাদী আওয়ামী লীগের দুই নেতা। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থক।
সেনবাগ, বেগমগঞ্জ ও সুধারাম থানা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া বাজারে বিএনপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থানে পৌঁছান। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে বিএনপির কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। পরে পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ছাতারপাইয়ার এই সংঘর্ষের ঘটনায় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বদিউল আলম বাদী হয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। এই মামলায় রাতে অভিযান পরিচালনা করে চারজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বেগমগঞ্জ উপজেলার কাদিরপুর এলাকায় বিএনপির একই কর্মসূচিকে ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৬০ থেকে ৭০ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেছেন। এই মামলায় পুলিশ এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
অন্যদিকে, সদর উপজেলার অশ্বদিয়া এলাকায় বিএনপির পদযাত্রায় হামলা চালান স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অশ্বদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আওয়ামী লীগ সমর্থক মো. রিয়াজ হোসেন বাদী হয়ে সুধারাম থানায় গতকাল রাতে একটি মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, সুধারাম থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম ও বেগমগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহেদুল হক পৃথক তিনটি মামলা হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রথম আলোকে তাঁরা বলেন, মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিএনপি জেলার নয়টি উপজেলায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল। কিন্তু সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সদর, কবিরহাট, চাটখিল ও সোনাইমুড়ীতে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা বিনা উসকানিতে বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছেন, হামলা করেছেন। সেনবাগে পুলিশও বিএনপির কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ক্ষমতাসীন দলকে খুশি করতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দিয়েছে।