যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে নির্মিত কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল চালু হচ্ছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন টার্মিনালটির উদ্বোধন করবেন। দেড় হাজার ট্রাকের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন টার্মিনালটি চালু হলে বন্দরের দীর্ঘদিনের যানজট কমবে। এতে বন্দরের গতিশীলতা বাড়ার পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়বে।
স্থলবন্দরের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মামুন কবীর তরফদার বলেন, কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আগামীকাল টার্মিনালটি উদ্বোধন করা হবে। টার্মিনালটি চালু হলে বন্দরের দীর্ঘদিনের যানজট কমবে এবং বন্দরের গতিশীলতা বাড়বে। ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের অপেক্ষার সময় কমে যাবে।
স্থলবন্দর সূত্র জানায়, বেনাপোল স্থলবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ৩২৯ কোটি ২৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪১ দশমিক ৩৯ একর জমিতে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ করেছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে চলতি বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। প্রকল্পের আওতায় পার্কিং ইয়ার্ড, কার্গো ভবন, টার্মিনাল ব্যবহারকারীদের জন্য আধুনিক বন্দর সেবা ভবন, ইউটিলিটি ভবন, ফায়ার স্টেশন, ১০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ওয়েব্রিজ স্কেল, ভারতীয় ট্রাকচালকের জন্য গোসলখানা, রান্নার ব্যবস্থা, রেস্তোরাঁ, বিশ্রামাগার, আধুনিক ওয়াশ ব্লকসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে।
সূত্র জানায়, টার্মিনালের নিরাপত্তায় স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এ ছাড়া অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম বসানো হয়েছে। দ্বিতীয় বাণিজ্য গেট (সেকেন্ড ট্রেড গেট) নামে একটি কার্গো গেট নির্মাণ করা হয়েছে। ভারত সরকার দৃষ্টিনন্দন এই গেট নির্মাণ করেছে। গেটটির নাম ‘মৈত্রী গেট’। এখনই দ্বিতীয় বাণিজ্য গেটটি চালু হচ্ছে না। পরবর্তী সময়ে ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলো এখনকার আমদানি-রপ্তানি কার্গো গেটের পরিবর্তে দ্বিতীয় বাণিজ্য গেট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকবে।
স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০টি পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে আসে। এসব ট্রাক থেকে পণ্য নামাতে (আনলোড) পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগে। ট্রাকগুলো আমদানি-রপ্তানি কার্গো গেট দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। প্রথমে আমদানি-রপ্তানি কার্গো শাখার সফটওয়্যারে ট্রাক এন্ট্রি নিয়ে সরাসরি বাইপাস সড়কে ওজন স্কেলে চলে যায়। ওজন দেওয়ার পর ট্রাকগুলো টিটিআই (ট্রাক টার্মিনাল অব ইন্ডিয়া) মাঠে চলে যায়। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় কিছু ট্রাক (ভারত থেকে আমদানি করা ট্রাকের চেসিস) টিটিবি (ট্রাক টার্মিনাল অব বাংলাদেশ) মাঠে চলে যায়। এরপর পোস্টিং শাখা থেকে ট্রাকগুলোকে পোস্টিং দেওয়া হয়। সেই অনুয়ায়ী ট্রাকগুলো স্থলবন্দরের নির্ধারিত ছাউনিতে গিয়ে পণ্য খালাস করে ভারতে ফিরে যায়। পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ডের ওজন স্কেলে ওজন দিয়ে ইয়ার্ডে অবস্থান করে। পরে ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড থেকে ভারতীয় ট্রাক থেকে পণ্য বাংলাদেশি ট্রাকে তুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, টিটিআই মাঠে ৪০০ ও টিটিবি মাঠে ২৫০, ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ডের ২০০ ট্রাকের ধারণক্ষমতা আছে। কিন্তু জায়গার সংকুলান না হওয়ায় পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাকগুলো যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক, আমদানি-রপ্তানি কার্গো গেট-সংলগ্ন বাইপাস সড়ক এবং বন্দরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন শেডের ইয়ার্ডে রাখা হয়। এতে প্রায়ই যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ও বাইপাস সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বন্দরের অভ্যন্তরে শেডের (৩৪টি শেড) ইয়ার্ডে ট্রাক থেকে পণ্য নামাতে সমস্যা হয়।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক রাশেদুল সজীব নাজির বলেন, কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল চালু হলে বন্দরের দীর্ঘদিনের যানজট ও পণ্যজট কমে যাবে। যেহেতু এখানে এক থেকে দেড় হাজার ট্রাক একসঙ্গে থাকতে পারবে, সে কারণে দ্রুত পণ্য নামানো সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভারতীয় ট্রাক পণ্য নামিয়ে চলে যাবে। আমদানিকারকদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে না। কেননা, পণ্য ছাড় করতে দেরি হলে আমদানিকারকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হতো। সেটি আর লাগবে না। যত বেশি পণ্যবাহী ট্রাক আনলোড হবে, সরকারও তত বেশি রাজস্ব পাবে।