লালমাটির পাহাড়, মাঝে পিচঢালা আঁকাবাঁকা সড়ক। পাহাড়ের গায়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কাঁঠালগাছ। আগাগোড়া কাঁঠাল ঝুলে আছে। সেই গাছে পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণ এসে লাগে নাকে। পাকা কাঁঠালের ম–ম ঘ্রাণে মোহিত হন পথচারীরা।
গত শুক্রবার সকাল সাতটা। সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড়জুড়ে। পিচঢালা সড়কের পাশে দূরদুরান্ত থেকে আসা পাইকারররা ভিড় করছেন। আছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁরা সাবাই অপেক্ষা করছেন কাঁঠাল কেনার জন্য। গাছে উঠে কাঁঠাল সংগ্রহে ব্যস্ত বাগানের মালিকেরা। এই দৃশ্য লালমাই পাহাড়ের হাতিগাড়া, ধনমুড়া, সালমানপুর, রাজারখোলা, চৌধুরীখোলা, ভাঙ্গামুড়া, শ্রীবিদ্যা, বারপাড়া, ধর্মপুর ও রতনপুর ও জামমূড়া এলাকার।
লালমাই পাহাড়ের রাজারখলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জমির উদ্দিন ও ইউসুফ মিয়া তাঁদের বাগান থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে স্তূপ করছেন। জমির উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিটি কাঁঠাল পাইকারি ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি। এ বছর ৩০টি গাছ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করেছি।’
ধর্মপুর এলাকায় দেখা যায়, পিকআপ ভ্যান ভর্তি করে কাঁঠাল নিয়ে বাজারের উদ্দেশে ছুটছেন ইকরাম হোসেন। ইকরাম জানান, তিনি এ কাঁঠালগুলো স্থানীয় নিমসার বাজারে নিয়ে যাবেন। সেখানে খুচরা মূল্যে বিক্রি করবেন। এই জনপদে লালমাই পাহাড়ের কাঁঠালের অনেক সুনাম আছে।
রাজারখোলা এলাকার অন্তত ১০ জন স্থানীয় বাসিন্দার ভাষ্য, আগে লালমাই পাহাড়ে প্রচুর কাঁঠাল বাগান ছিল; কিন্তু পাহাড় কেটে ফেলায় দিন দিন বাগানের পরিমাণ কমে আসছে। লালমাই পাহাড়ের কাঁঠালের বৈশিষ্ট৵ তুলে ধরে রাজারখলা এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, লালমাই পাহাড়ের কাঁঠাল রসালো ও মিষ্টি। পাকা কাঁঠাল ভাঙলে ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে।
কুমিল্লার মাটি কাঁঠাল চাষের বেশ উপযোগী উল্লেখ করে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) শেখ আজিজুর রহমান জানান, এখানকার প্রতিটি বাড়িতে কাঁঠালের গাছ রয়েছে। তবে লালমাই পাহাড়ে কাঁঠালের উৎপাদন বেশ ভালো হয়। এখানে কাঁঠালের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগ সচেষ্ট রয়েছে।
কোটবাড়ী বিজিবি ক্যাম্পের পশ্চিম পাশে দেখা যায়, কাঁঠালের স্তূপ। জায়গাটা ‘মূড়া’ নামে পরিচিত। পাইকাররা এসে কাঁঠাল পছন্দ করছেন। চান্দিনা সদরের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে এসেছেন তিনি। ৪০টা কাঁঠাল কিনেছেন। ছোট–বড় প্রতিটি ৬০ টাকা করে। বাজারে তিনি এগুলো ৮০-১০০ টাকা দরে বিক্রি করবেন।
মূড়ার ওপরের স্থানে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা আজিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লালমাই পাহাড়ে গাছে কাঠবিড়ালি, বন্য কিছু পাখি ও শিয়াল পাকা কাঁঠাল খায়। আমরা সকালে বেশ কিছু কাঁঠাল সংগ্রহ করি, যেগুলো পাখি কিংবা কাঠবিড়ালির খাওয়া। সেগুলো কম দামে বিক্রি করি। এসব কাঁঠাল স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও বিতরণ করি।’
লালমাই পাহাড়ের অবস্থান কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায়। এটি লালমাই-ময়নামতি পাহাড়শ্রেণি নামেও পরিচিত। পাহাড়শ্রেণিটি উত্তর-দক্ষিণে সম্প্রসারিত এবং কুমিল্লা শহরের প্রায় মাঝ বরাবর চলে গিয়েছে। এটির উত্তর প্রান্ত রানির বাংলো এবং দক্ষিণপ্রান্ত চান্দিমুড়া পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে স্থানীয়ভাবে উত্তর প্রান্তকে ময়নামতি এবং দক্ষিণ প্রান্তকে লালমাই বলা হয়।
সদর দক্ষিণ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির খান বলেন, স্থানীয়ভাবে লালমাই পাহাড়ের কাঁঠালের সুনাম অনেক। নতুন করে অনেকে কাঁঠাল ও আনারস বাগান করছেন। দীর্ঘ বছর ধরে কাঁঠাল চাষ করে এখানের কৃষকেরা ভালো আয় করছেন। কৃষি বিভাগ থেকে এখানকার বাসিন্দাদের সব সময় পরামর্শসহ সব রকম সহযোগিতা দেওয়া হয়।