রাজশাহীর বাগমারায় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের একটি কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির একটি অংশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের সাতজন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে।
এ ঘটনায় উভয় পক্ষ পরস্পরকে দায়ী করছে। আহত ব্যক্তিদের দাবি, বিএনপির ইউনিয়ন শাখার সভাপতির নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের লোকজন তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার হামিরকুৎসা হাটকে কেন্দ্র করে প্রায় ২৫ বছর আগে সেখানে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন নামের একটি সংগঠন গড়ে ওঠে। হাটে আসা ট্রাকে মালামাল ওঠানো–নামানোর নিয়ন্ত্রণ ও দেখভাল করে থাকেন সংগঠনের সদস্যরা। এ জন্য ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করেন সংগঠনের নেতারা। সংগঠনটি স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বিএনপির নেতারাও এর সদস্য হিসেবে আছেন। দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন হামিরকুৎসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৫ নম্বর ওয়ার্ড শাখার সভাপতি আবদুর রশিদ শাহ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল বিকেলে হামিরকুৎসা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সুমন হোসেন, সাধারণ সম্পাদক কাউসার হোসেনসহ দলের ১০-১২ জন নেতা-কর্মী ওই প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিতে যান। তাঁরা কার্যালয়ের সামনে গেলে বিএনপির একটি পক্ষের সঙ্গে উত্তেজনা দেখা দেয়। কার্যালয়ে থাকা ফাইলপত্র ছুড়ে ফেলে দেন দখল নিতে যাওয়া নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের হামলায় সংগঠনের সভাপতি আবদুর রশিদ শাহ আহত হন। খবরটি জানাজানি হলে উভয় পক্ষ হামিরকুৎসা বাজারে অবস্থান নেন। রাতে আবারও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদকের বাবা আবদুল মান্নান, ছাত্রদলের ইউনিয়ন শাখার সভাপতি সুমন হোসেন, সাধারণ সম্পাদক কাউছার হোসেন, যুবদলের কর্মী হান্নু রশিদসহ সাতজন আহত হন। রাতেই আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাতভর উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলে।
ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ অভিযোগ করেন, হামিরকুৎসা বাজারে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নামে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি চলে আসছে। ছাত্রদলের নেতাসহ তাঁরা তা বন্ধ করতে গিয়েছিলেন। হামিরকুৎসা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বেলাল হোসেন শাহের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগের লোকজন তাঁদের ওপর হামলা করেছেন। বিএনপি নেতা চাঁদাবাজির জন্য এটা করেছেন। তাঁরা ওই নেতার অপসারণ চেয়েছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির সভাপতি বেলাল হোসেন শাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কিছু নেতা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় দখল করে সেখানে দলীয় কার্যালয় করতে চেয়েছিল। তারেক রহমানের নির্দেশের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তাঁদের ফেরত যেতে বলেছিলাম। তবে তাঁরা তা না শুনে হামলা করেছে।’ যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের ওপর কে হামলা করল—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেখানে শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন ছাড়াও সাধারণ লোকজন ছিলেন, তাঁরাই হয়তো হামলা করেছেন।
সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাকিম বলেন, ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে নির্দিষ্ট কোনো দলের নেতারা জড়িত নন। তবে আওয়ামী লীগের লোকজন নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি শুনেছেন বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ মামলা করেনি।