দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে জমি দখল, মানসিক নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাঁর ভাতিজি। গতকাল সোমবার সকালে বীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের হলরুমে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
আমিনুল ইসলামের ভাই মৃত আমজাদ হোসেনের কন্যা রেহনুমা হোসেন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। রেহনুমা অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী। সম্প্রতি দেশে এসেছেন তিনি।
আমিনুল ইসলাম দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ, কাহারোল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। এবারসহ টানা তিনবারের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তিনি। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবারও চেয়ারম্যান পদে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাতিজি ও মৃত ভাতিজার স্ত্রী আমার ভাইয়ের রেখে যাওয়া সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করতেছিল। নাবালকের সম্পত্তি যেন বেহাত না হয়, সে জন্য পারিবারিক আদালতে একটি মামলা করেছি। সেই মামলা এখনো চলমান।’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, নির্বাচন চলাকালে এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন করে তাঁকে হেয়প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চলছে। তাঁর প্রতিপক্ষের লোকজন এ মিথ্যা অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে এত দিন পর তাঁদের (ভাতিজি) উসকে দিচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রেহনুমা বলেন, ‘আমার বাবারা তিন ভাই। আমিনুল ইসলাম আমাদের মেজ চাচা। আমরা চার বোন, এক ভাই। ২০২১ সালে একমাত্র ভাই ইমরান তানয়ীম হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ছেলের মৃত্যুশোকে একই দিনে আমাদের বাবা আমজাদ হোসেনও মৃত্যুবরণ করেন। বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যুর কয়েক দিন পরই চাচা আমিনুল ইসলাম বাবার রেখে যাওয়া জমিজমা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাঁর কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিভিন্নভাবে হয়রানি শুরু করেন। এমনকি আমাদের নিয়োগকৃত বর্গাচাষি, ম্যানেজার, দোকানের ভাড়াটেদের হুমকি দেন। ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলার কলেজ মোড় এলাকায় আমাদের পৈতৃক বাড়ি দখল ও সদর দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন। ওই রাতে পুলিশের সহায়তায় আমরা রক্ষা পাই।’
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভাইয়ের জমি দখল, দোকান দখল, ব্যাংকের সঞ্চিত টাকা উত্তরাধিকারীদের না দিতে ব্যবস্থাপককে হুমকি, মিল চাতাল দখলের জন্য সাইনবোর্ড স্থাপনসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ তোলেন রেহনুমা হোসেন। এ ঘটনায় ২০২২ সালের ৭ জুলাই চাচার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার তথ্য জানান রেহনুমা।
আমজাদ হোসেনের তিন মেয়ে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী। বছরখানেক আগে তাঁদের ভাই মৃত ইমরান তানয়ীমের স্ত্রী রুশদিয়া আলী খান ও তাঁর ছেলে যোহায়ের তাশরিককে (৪) অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যান বোনেরা।
সংবাদ সম্মেলনে রেহনুমা হোসেন জানান, রেহনুমা ও তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী রুশদিয়ার বিরুদ্ধে তাঁদের শিশু যোহায়েরের সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ এনে ২০২২ সালের ১৩ জুন দিনাজপুর পারিবারিক আদালতে একটি মামলা করেন আমিনুল ইসলাম। তিনি ওই শিশুর সম্পত্তির অভিভাবকত্ব দাবি করেন। এটি সম্পদের প্রতি আমিনুলের লোভের বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেন রেহনুমা।
রেহনুমা জানান, নাবালক শিশুর সম্পত্তিতে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়োগ করা হয় তাঁর ভাইয়ের শ্বশুর ও শিশুটির নানা মোনতাদির আলী খানকে। পারিবারিক আদালতে মামলার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। গত ২৮ এপ্রিল তিনি মারা যান। পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা ও নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করার কথা জানান রেহনুমা হোসেন।