ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়াকে পুলিশ সদস্যরা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়ার বাবা আবদুল হক ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করতে চেয়ারম্যানের ছতুরপুরের বাসায় গিয়েছিল। আবদুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। এ সময় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের মারধরে আহত জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি অভিযোগ করেন, চতুর্থ ধাপে ৫ জুন অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে তিনিসহ তাঁর লোকজন আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আল জাবেরকে সমর্থন দিচ্ছেন। তাই ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছিমা মুকাই আলীর মদদে পুলিশ তাঁকে মারধর করেছে। তবে পুলিশের দাবি, চেয়ারম্যানের সঙ্গে পুলিশের দেখাই হয়নি।
বিজয়নগর থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দণ্ডবিধির ৪২০ ধারার একটি মামলায় আদালত ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূঁইয়ার বাবা আবদুল হক ভূঁইয়াকে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন। সেই সঙ্গে তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালত এ দণ্ডাদেশ দেন। এর পর থেকে আবদুল হক পলাতক রয়েছেন। ওই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করতেই আজ দুপুর ১২টার দিকে চেয়ারম্যানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আবদুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া জামাল উদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে পৃথক একটি মামলা রয়েছে। ওই মামলায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান গত রোববার ওই মামলায় জামিন পান।
পুলিশ সদস্যের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও চলতি নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছিমা মুকাই আলীর দেবর উপজেলার সিংগারবিল ইউপি চেয়ারম্যান দুই মো. মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া ওমোশাইদ ইসলাম ভূঁইয়াসহ ৮-১০ জন লোক ছিলেন।জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া, আহত ইউপি চেয়ারম্যান
জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে থাকা একটি মামলায় গত রোববার আদালত থেকে জামিন পেয়েছি। এর কাগজ আদালত থেকে সংগ্রহ করে নিজের কাছে রেখেছি। আজ দুপুর ১২টার দিকে বিজয়নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জামিল খান, উপপরিদর্শক (এসআই) পীযূষ, উপজেলার চম্পকনগর পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বরত ইনচার্জ রবিউল ইসলামসহ ১০-১৫ পুলিশ সদস্য আমার বাড়িতে আসেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে জানিয়ে আমাকে নিয়ে যেতে চাইছিল পুলিশ। পরে আমি গত রোববার থেকে জামিনে আছি এবং আদালতের কাগজ দেখানোর পরও রবিউল ইসলামসহ সঙ্গে থাকা ১০-১৫ পুলিশ সদস্য আমাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে অযথা আমার বসতঘরে ভাঙচুর করেন। পরে তাঁরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত থাকায় আমার বাবাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছি।’
জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, পুলিশ সদস্যের সঙ্গে উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও চলতি নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী নাছিমা মুকাই আলীর দেবর উপজেলার সিংগারবিল ইউপি চেয়ারম্যান দুই মো. মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া ওমোশাইদ ইসলাম ভূঁইয়াসহ ৮-১০ জন লোক ছিলেন।
বিজয়নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জামিল খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও তাঁর বাবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। তবে চেয়ারম্যান আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। আমরা চেয়ারম্যানের বাবাকে গ্রেপ্তার করে সঙ্গে সঙ্গে থানায় চলে এসেছি। চেয়ারম্যানকে মারধরের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। চেয়ারম্যান আমাদের কোনো প্রকার সহযোগিতা করেননি। এখানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কোনো ইস্যু নেই। চেয়ারম্যানকে মারধর ও বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে ভিন্ন কথা বলেন। তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের সঙ্গে পুলিশের কোনো দেখাই হয়নি।