দীর্ঘ ২৩ বছর পর নিজের নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলের মধুপুরের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাতায়াত শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। বিষয়টি ভালোভাবে দেখছেন না স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক ও তাঁর অনুসারীরা। এ নিয়ে মধুপুর ও ধনবাড়ীতে চলছে নানা গুঞ্জন।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা–কর্মীরা বলছেন, মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-১ আসন থেকে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন আবুল হাসান চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। মন্ত্রী হওয়ার পর স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। একপর্যায়ে মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ তাঁর বিরুদ্ধে চলে যায়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তৎকালীন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ধনবাড়ীর বাসিন্দা মো. আব্দুর রাজ্জাক এলাকায় যাতায়াত শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সমর্থন পান। ২০০১ সালে আব্দুর রাজ্জাক চাকরি ছাড়লে আওয়ামী লীগ তাঁকে টাঙ্গাইল-১ আসনে মনোনয়ন দেয়। তিনি বিজয়ী হলে আবুল হাসান চৌধুরী মধুপুর ত্যাগ করেন। এরপর তিনি আর মধুপুরে ফেরেননি। অন্যদিকে আব্দুর রাজ্জাক ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন। ২০০৮ ও ২০১৮ সালে মন্ত্রিত্ব পান। পাশাপাশি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন।
স্থানীয় নেতা–কর্মীরা জানান, গত বছর থেকে আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে মধুপুর ও ধনবাড়ীর কিছু নেতার দূরত্ব তৈরি হয়। মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চান। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি। তবে এবার উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হন। আব্দুর রাজ্জাক উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মধুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলীকে সমর্থন দেন। ধনবাড়ীতে বর্তমান চেয়ারম্যান হারুনার রশিদকে সমর্থন দেন আব্দুর রাজ্জাক। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলামসহ চারজন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন। উভয় উপজেলায়ই নির্বাচনী প্রচারণায় বিভিন্ন প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। ৯ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মধুপুরে আবদুর রাজ্জাক–সমর্থিত ইয়াকুব আলী ও ধনবাড়ীতে রাজ্জাকবিরোধী অংশের নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ তালুকদার বিজয়ী হয়েছেন।
এর মধ্যে ৫ মে মধুপুরে আসেন আবুল হাসান চৌধুরী। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খানের সমর্থনে আয়োজিত নির্বাচনী সভায় যোগ দিয়ে তাঁর পক্ষে ভোট চান। পরে সোমবার মধুপুরের জলছত্র এবং আলোকদিয়া এলাকায় ছরোয়ার আলম খানের পক্ষে নির্বাচনী সভায় অংশ নেন তিনি।
আবুল হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, রাজনীতি থেকে বাইরে থাকলেও তিনি বঙ্গবন্ধুর নীতি–দর্শনের বাইরে কেউ নন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বড় বোনের মতো ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। তিনি ২৩ বছর ধরে মধুপুরে আসেননি। আজকে আসা এটা বলে দেয়, তিনি মনেপ্রাণে চান, ছরোয়ার আলম খানের বিজয় হোক। তিনি বলেন, আগামীতে টাঙ্গাইলে সৃজনশীল সব কাজের সঙ্গে তিনি জড়িত থাকবেন। জনগণ চাইলে যেকোনো প্রয়োজনে তিনি তাঁদের পাশে থাকবেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও আব্দুর রাজ্জাক–সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াকুব আলী বলেন, ওয়ান–ইলেভেনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কারাগারে রাখা, দেশে ফিরতে না দেওয়া, সেনা–সমর্থিত দল গঠন করে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আবুল হাসান চৌধুরী। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের কাছে বেইমান হিসেবে পরিচিত। তাঁকে আওয়ামী লীগ গ্রহণ করবে না। মধুপুরের জনগণও তাঁকে গ্রহণ করবেন না।
তবে মধুপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মাসুদ পারভেজ বলেন, আবুল হাসান চৌধুরীকে মধুপুরবাসী মনেপ্রাণে ভালোবাসেন। তিনিও মধুপুরবাসীকে ভালোবাসেন। সেই ভালোবাসার জন্য ছরোয়ার আলম খানের পক্ষে ভোট চাইতে মধুপুরে এসেছেন। তিনি ভবিষ্যতে মধুপুরে সংসদ সদস্য প্রার্থী হলে তিনি তাঁর পক্ষে থাকবেন।
জানতে চাইলে সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, আবুল হাসান চৌধুরী জনগণ থেকে বিছিন্ন। তাঁর কোনো অবস্থান এখন নেই। তিনি জরুরি অবস্থার সময় প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাসনে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এমপি ও মন্ত্রী হিসেবে তিনি মধুপুরে ব্যর্থ হয়েছেন। জনগণ তাঁকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাঁকে আর মধুপুর–ধনবাড়ীর মানুষ গ্রহণ করবেন না।