পাবনায় যেখানে কাঁচা মরিচ হয়, সেখানেই দাম বেড়ে দ্বিগুণ

কাঁচা মরিচ
ফাইল ছবি

দেশে কাঁচা মরিচ উৎপাদনের অন্যতম এলাকা পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় মাত্র এক দিনের ব্যবধানে আবারও দাম বেড়েছে। ভারত থেকে মরিচ আমদানি শুরু হওয়ার খবরে গত সোমবার উপজেলার পাইকারি বাজারে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে। গতকাল বুধবার সেই মরিচ পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

কৃষক ও মরিচ ব্যবসায়ীদের কথা, স্থানীয়ভাবে ফলন বিপর্যয়ের কারণে বাজারে কাঁচা মরিচের জোগান একেবারেই কম। এতে চাহিদার তুলনায় ব্যাপক ঘাটতি হচ্ছে। এ সুযোগে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হলে দু-এক দিন দাম কিছুটা কম ছিল। এখন আবার আগের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

কাঁচা মরিচের বাজারে এই যে অস্থিরতা, তা কবে কমতে পারে, সে বিষয়ে কথা হয় কৃষক, ব্যবসায়ী ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তাঁদের ভাষ্য, স্থানীয় মরিচগাছগুলো ফলনে না ফেরা পর্যন্ত বাজারে কাঁচা মরিচ নিয়ে অস্থিরতা কাটার সম্ভাবনা কম।

দাবদাহ ও অন্যান্য কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মরিচগাছগুলো ইতিমধ্যেই বেশ সুস্থ হয়ে উঠেছে। গাছে পাতা ও ফুল এসেছে। আবহাওয়া ঠাকঠাক থাকলে আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে স্থানীয় মরিচের ফলন বেশ বেড়ে যাবে। তখন বাজারে জোগান বাড়বে। কাঁচা মরিচের বাজার স্থিতিশীল হবে।

গতবারের তুলনায় সাঁথিয়া উপজেলায় এবার অবশ্য মরিচের আবাদ কম হয়েছে। কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর ২ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছিল। বেশির ভাগ কৃষকই গত বছর মরিচের আবাদ করে লোকসানে পড়েন। এ কারণে অনেকে এবার মরিচের আবাদ করেননি। এবার উপজেলায় ২ হাজার ৯৪ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। উপজেলায় মরিচের আবাদ শুরু হয় ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিক থেকে। আগস্টের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মরিচ পাওয়া যায়। তবে এবার এপ্রিল ও মে মাসজুড়ে প্রচণ্ড খরায় বেশির ভাগ মরিচগাছ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গতকাল সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মরিচের খেত ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গার মরিচখেতগুলো সতেজ হয়ে উঠেছে। এসব খেতের মরিচগাছে ফুল ও পাতা আসতে শুরু করেছে। তবে নিচু এলাকার কিছু মরিচখেত বৃষ্টির কারণে আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলার ছেঁচানিয়া গ্রামের মরিচচাষি ময়সার আলী বলেন, এবার এক বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করে শুরুতে ভালো ফলন পেয়েছিলেন। তখন দাম কম থাকলেও ভালো ফলনের কারণে ওই সময় প্রায় ৫০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। কিন্তু এরপর প্রচণ্ড খরায় মরিচগাছগুলো কুঁকড়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক মাস ধরে তিনি তাঁর মরিচখেত থেকে তেমন কোনো ফলনই পাচ্ছেন না। তবে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তাঁর মরিচখেতের দারুণ উপকার হয়েছে। গাছে প্রচুর ফুল এসেছে। তাই তিনি আশা করছেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে দুই সপ্তাহের মধ্যে মোটামুটি ভালো ফলন পাবেন।

পাইকারি কাঁচা মরিচের বাজার উপজেলার করমজা চতুরহাটে গিয়ে দেখা যায়, অল্প কয়েক কৃষক কাঁচা মরিচ নিয়ে এসেছেন। সেখানে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হতে দেখা যায়। ব্যবসায়ীরা বলেন, কাঁচা মরিচের দাম দিনে সর্বোচ্চ ৪৮০ টাকা কেজি হয়েছিল।

উপজেলার বোয়ালমারি হাটে কথা হয় পাবনার মরিচ ব্যবসায়ী রতন কুমার পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ হাটে যা মরিচ ওঠে, তার সবই স্থানীয়। অথচ খেতে ফলন নেই বলে মরিচ খুবই কম উঠছে। স্বাভাবিক সময়ে এই হাট থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ ট্রাক মরিচ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেত। এখন দু-তিন ট্রাক মরিচও হচ্ছে না।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার গোস্বামী বলেন, ‘খরায় কুঁকড়ে যাওয়া মরিচগাছে পাতা ও ফুল আসছে। স্বাভাবিক আবহাওয়া বজায় থাকলে ১০-১২ দিনের মধ্যে কৃষকেরা প্রচুর মরিচ ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছি।’