মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। আজ বুধবার বেলা তিনটার দিকে উপজেলার মুক্তারপুরের পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় হওয়া এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছেন। বিকেল চারটার দিকে পুলিশের আরও কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিএনপি কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন দুজন সংবাদকর্মী।
বিএনপি নেতাদের দাবি, পুলিশের এক কর্মকর্তা তাঁদের কর্মসূচির ব্যানার ছিঁড়ে ফেলায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। মুহুর্মুহু ছোড়া কাঁদানে গ্যাস, গুলি ও রাবার বুলেটে তাঁদের ৫০-৬০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে পুলিশ দাবি করেছে, বিএনপি নেতা-কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়েছে। এতে পুলিশের ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন।
পুলিশ, বিএনপি নেতা-কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ বেলা তিনটার দিকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে মিছিল নিয়ে মুক্তারপুর এলাকায় আসে। এ সময় পুলিশ তাঁদের সেখানে অবস্থান করতে নিষেধ করে। মুক্তাপুর থেকে পরে নেতা-কর্মীরা ট্রাকে করে পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় যান। সেখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল আসতে শুরু করে। এ সময় মুন্সিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম বিএনপির একটি মিছিলের ব্যানার ধরে টান দেন। এতে নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তাঁরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। প্রথম দিকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট বিএনপির ইটপাটকেলের জবাবে গুলি ছোড়ে পুলিশ। তবে পরবর্তী ৩৫ মিনিটি পুলিশকে কোণঠাসা করে ফেলেন বিএনপির কর্মীরা। তিন দিক থেকে ছোড়া ইটপাটকেলে বেশ কয়েকজন আহত হন। কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে পিছু হটতে হটতে ধলেশ্বরী নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখা যায়। ঘটনাস্থলে বিএনপির এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আহত অন্য নেতা-কর্মীরাও কেউ মুন্সিগঞ্জ জেলা হাসপাতালে না গিয়ে অন্যান্য হাসপাতালে যান। বিকেল চারটার দিকে পুলিশের একাধিক দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া দৈনিক সমকালের জেলা প্রতিনিধি কাজী সাব্বির আহমেদ ও দৈনিক দিনকালের জেলা প্রতিনিধি গুলজার হোসেন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন হিসেব পাঁচ-সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মিনহাজ উল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান, পরিদর্শক মোজাম্মেল হক, উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল বাসার, ফরিদুল হাসান, লিটু গাজী, ফাইজুর রহমান, কাজল দাস, মাইনুদ্দিন সুকান্ত বাউল, আনিসুল হক, অজিত, কনস্টেবল রায়হানসহ অন্তত ২০-২৫ জন। বিএনপি নেতা-কর্মীরা মুন্সিগঞ্জ জেলা হাসপাতালে না যাওয়ায় তাঁদের নাম জানা যায়নি।
নাম না প্রকাশের শর্তে পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালাল। আমরা তাঁদের অনেক অনুরোধ করলাম। বিনয়ের সঙ্গে বললাম। হাত-পায়ে পর্যন্ত ধরলাম। তাঁরা শুনলই না। তাঁরা আমাদের বেদমভাবে পেটাল। বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল আমাদের ওপর নিক্ষেপ করেছে। আমরা নিজেদের রক্ষা করতে একপর্যায়ে পানির মধ্যে লাফ দিলাম। সেখানেও তাঁরা আমাদের মারতে শুরু করল।’
জেলা বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের অনুমতি নিয়েই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছিলাম। বেলা তিনটার দিকে আমাদের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে মুক্তারপুর এর দিকে আসছিলেন। তখন পুলিশ আমাদের লোকজনকে মিছিল করতে নিষেধ করে। আমাদের লোকজন মিছিল করা বন্ধ করে দেয়। সে সময় পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মিছিল থেকে ব্যানার টেনে ছিঁড়ে নিতে চায়। তখন বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বাগ্বিতণ্ডা হয়। পুলিশ আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। পরে আমাদের লোকজন আত্মরক্ষার জন্য ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং গুলি ছুড়তে থাকে। এতে আমাদের অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের গুলিতে আহত একজনের অবস্থা গুরুতর।’
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান বলেন, পুলিশ সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল। বিএনপির নেতা-কর্মীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করেন। তাঁদের নিষেধ করায় তাঁরা আরও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে পুলিশের অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছেন।