সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর রাত সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। বুধবার দিবাগত রাত ৩টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎ ফেরেনি। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছেড়েছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের বাইরে অবস্থান করছে পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায় বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রাত ২টার দিকে কয়েকটি হলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় কিছু শিক্ষার্থী হল ছেড়ে চলে যান। পরে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরপরই আরও অনেকে হল ছাড়েন। অনেকে রাত দেড়টার দিকেও হল ছেড়েছেন। অধিকাংশ হলই এখন শিক্ষার্থী শূন্য।
ছাত্রদের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের শিক্ষার্থী সজিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে হল ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। পরে ভাবলাম কাল (বৃহস্পতিবার) সকালে ছেড়ে দেব। কিন্তু রাত ১টার দিকে গার্ড বললেন, হলে পুলিশ তল্লাশি চালাবে। এটি জানার পর হল থেকে বের হয়েছি। হলে এখন আর কেউ নেই।’
রাত ২টা ৪৯ মিনিটে বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের নিরাপত্তারক্ষী করিম বলেন, হলে দুজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্র আছেন। তাঁরা চোখে দেখেন না। হলে আর কাউকে দেখেননি। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন দুজন আন্দোলনের কারণে দিনের বেলায় কোথাও যেতে পারেননি। বৃহস্পতিবার সকালে চলে যাবেন। রাত একটার দিকে তাঁদের খাবার দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে বুধবার সকালে জরুরি সিন্ডিকেটের সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের বিকেল ৪টার মধ্যে হল ছাড়তে বলা হয়। দুপুর ১২টার দিকে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান।
সিন্ডিকেটের এ সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশাসনিক ভবনে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এতে ভবনের জানালার কাচ ভেঙে যায়। ভবনের উভয় ফটকে তালা ঝুলিয়ে উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন তাঁরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়ক, মূল ফটক ও আশপাশের এলাকায় সাঁজোয়া যানসহ অবস্থান নেয় পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব।
বিকেল সোয়া ৫টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ সদস্যরা কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়েন। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। বেশ কয়েকজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাঁদের সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশের সহযোগিতায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপাচার্যসহ অবরুদ্ধ অন্যরা প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হয়ে যান। এরপর ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ সরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের বাইরে অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীরা প্রথমে বটতলা এলাকায় জড়ো হয়ে পরে হলে ফিরে যান। এরপর কিছু শিক্ষার্থী হল ছেড়ে দেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেলে হল ছেড়ে যান আরও শিক্ষার্থী।