তীব্র গরমে বাঁশবাগানের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন লোকজন। গতকাল বুধবার তারাগঞ্জ উপজেলার তারাগঞ্জের মেনানগর এলাকায়
তীব্র গরমে বাঁশবাগানের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন লোকজন। গতকাল বুধবার তারাগঞ্জ উপজেলার তারাগঞ্জের মেনানগর এলাকায়

‘রইদোত মাঠোত থাকপার পাওছি না’

‘রইদের খুব তাপ, সকাল ১০টা পর্যন্ত ধান কাটির পাওছি। এরপর রইদোত মাঠোত থাকপার পাওছি না। এমনতোন তাপ থাকলে কাজকাম বন্ধ করি দিবার নাগবে।’ তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে এসব কথা বলছিলেন দিনমজুর কেচু মিয়া।

কেচু মিয়ার বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে। গতকাল বুধবার তাঁর সঙ্গে কথা হয় গ্রামের পাশে দোলাপাড়ার মাঠে। তিনি জানান, খেত থেকে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। প্রতিবছরের মতো তাঁরা ছয়জন দিনমজুর মিলে দল তৈরি করেছেন। তাঁরা জমির মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে খেতের ধান কাটেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক দিনে ছয়জনের একটি দল দুই একর জমির ধান কেটে মাড়াই করতে পারে। কিন্তু প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে এবার বোরো মৌসুমে তাঁরা সর্বোচ্চ ৬০ শতক (প্রতি একর ১০০ শতক) জমির ধান কাটা ও মাড়াই করতে পারছেন।

ওই দলের আরেক শ্রমিক মিঠু হোসেন বলেন, ‘এবার আকাশ উন্দাও হয়া মনে হয় আগুন পড়োছ। বেলা উঠার সাথে মাঠোত আর দমফেলা যাওছে না। গতবারের চেয়া এবার অর্ধেকও ধান কাটা–মাড়াই করি পাওছি না।’

শুধু দিনমজুর কেচু মিয়া ও মিঠু হোসেন নন, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে অনেক দিনমজুর কাজে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তারাগঞ্জের মানুষের জনজীবন। টানা তাপপ্রবাহে ঘর ঠান্ডা রাখতে অনেকেই টিনের চালে পানি ঢালছেন।

রংপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা যায়, রংপুর জেলায় গত মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বুধবার ছিল ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এখনই তাপমাত্রা কমার এবং বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।

গতকাল তারাগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে ও উঠানে চলছে বোরো ধান কাটা ও মাড়াই। কৃষকেরা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাঠ থেকে উঠে আসছেন। তাঁরা গাছের ছায়া ও বাড়ির উঠানে বিশ্রাম নিচ্ছেন। কেউ কেউ ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন। কোথাও কোথাও গাছের ছায়ায় দল বেঁধে বসে গল্প করছেন অনেকে।
উপজেলার প্রামাণিকপাড়ার মাঠে দুপুরে গরুর খাবারের জন্য বোরো ধানের মুড়া কাটছিলেন জুম্মাপাড়া গ্রামের গৃহবধূ রাহেনা বেগম। তিনি বলেন, ‘জ্যৈষ্ঠ মাসের পয়লা দিনে যে গরম! পুরা মাস যে কী হইবে, তাক আল্লাহ ভালো জানেন। ফ্যানের বাতাসও গরম নাগোছে। গরুর খাবার নাই জন্য রইদ মাথা থুইয়া নাড়া (মুড়া) কাটইপার আলছি। ৫ মিনিট নাড়া কাটলে ২০ মিনিট গাছের ছায়াত দম নিওছি।’

মেনানগর গ্রামের বড় কৃষক জিয়া রহমান বলেন, ‘ধান কাটা–মাড়াইয়ের সময় গরম থাকে, কিন্তু এবারের মতো অস্বাভাবিক গরম কোনোবার হয় নাই। শ্রমিকেরা ঠিকমতো ধান কাটতে পারছে না। পাকা ধান মাঠে পড়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিছে।’

বেলা তিনটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে কথা হয় রিকশাচালক খয়বার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাস্তার পিচ খুব হিট। খালি পাওত নাগলে পোড়া যাওছে। সকাল থাকি ২০০ টাকা ভাড়া মারনু, এ্যালা বাড়ি যাওছু। বাঁচি থাকলে মেলা কামাই হইবে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শহীন সুলতানা বলেন, গরমে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কয়েক দিন ধরে বহির্বিভাগে রোগীর বেশ চাপ। রোদে বের হতে নিষেধ, ছায়াযুক্ত স্থানে থাকা এবং পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।