দুপুরের প্রচণ্ড রোদ, ভ্যাপসা গরম। কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। এই রোদের মধ্যেও কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ফজলুল হক ওরফে শাহিন (৫০)। ছেলের চিন্তায় রাত কেটেছে নির্ঘুম। ভোরে রওনা হয়ে দুপুরে এসে পৌঁছেছেন সুনামগঞ্জে। কিছুটা অসুস্থ বোধ করছেন তিনি।
ফজলুল হক কথা বলতে গিয়ে একপর্যায়ে চোখের পানি ছেড়ে দেন। বলেন, ‘টানাপোড়েনের সংসার। অল্প আয়। কোনো রকম চলছি। ছেলেটা আমার খুবই শান্ত, নিরীহ। সে কোনো রাজনীতি করে না। সে নির্দোষ।’
ফজলুল হকের ছেলের নাম জায়িম সরকার (২১)। তিনি বুয়েটের শিল্প ও উৎপাদন কৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। থাকেন শেরে বাংলা হলে। ফজলুল হকের বাড়ি শেরপুর জেলা সদরের খোয়ারপাড় এলাকায়। গত রোববার বুয়েটের একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে টাঙ্গুয়ার হাওরে জায়িম সরকারও গ্রেপ্তার হন। এখন তিনি আছেন সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে।
গতকাল সোমবার রাতে টেলিভিশনে খবর দেখে ছেলের মুঠোফোনে বারবার কল দেন বাবা ফজলুল হক, কিন্তু ফোন বন্ধ পান। এরপর বিভিন্নভাবে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন গ্রেপ্তারের ঘটনা। সকালে এক আত্মীয়কে নিয়ে ছুটে আসেন সুনামগঞ্জে।
আজ দুপুরে জেলা কারাগারের মূল ফটকের সামনে কথা হয় ফজলুল হকের সঙ্গে। কথায় কথায় জানা যায়, ফজলুল হক এলাকায় সাইনবোর্ড লেখার কাজ করেন। চার ছেলের মধ্যে সবার বড় জায়িম সরকার। সে শেরপুরেই স্কুলে লেখাপড়া করে।
এসএসসি পাসের পর ঢাকার নটরডেম কলেজ ও এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বুয়েটে। সংসারে অভাবের কারণে দ্বিতীয় ছেলে অষ্টম শ্রেণি পাস করে লেখাপড়া ছেড়ে এখন বাবার সঙ্গে সাইনবোর্ড লেখার কাজ করছে। অন্য দুই ছেলে ছোট।
ফজলুল হক বলেন, ‘আমার ছেলেটা মিথ্যা বলবে না। সে কোনো রাজনীতি করে না। আমার একটাই চাওয়া, তার যেন কোনো ক্ষতি না হয়।’ ফজলুল হকের সঙ্গে থাকা রফিকুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, পরিবারটি দরিদ্র। অভাবের কারণে জায়িমকে ঢাকায় দিতে চাননি বাবা। পরে এলাকার শিক্ষকদের উৎসাহে তাঁকে ঢাকা পড়তে পাঠান। খুবই ঠান্ডা স্বাভাবের তিনি।
সরকারের বিরুদ্ধে ‘গোপন ষড়যন্ত্র ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার আশঙ্কায়’ টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে রোববার বিকেলে বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ বাদী হয়ে তাহিরপুর থানায় একটি মামলা করে। এই মামলায় এখন কারাগারে আছেন তাঁরা। পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার সবাই ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মী। বেড়ানোর অসিলায় সরকারের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র করতেই টাঙ্গুয়ার হাওরে এসেছিলেন তাঁরা। পুলিশ সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে।