নোয়াখালীতে কিশোর গ্যাংয়ের এক পক্ষের হামলায় নিহত তরুণ মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাওন
নোয়াখালীতে কিশোর গ্যাংয়ের এক পক্ষের হামলায় নিহত তরুণ মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাওন

নোয়াখালীর সেনবাগ

কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে ছেলে খুন, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা

‘আমার শাওন কই, আমার শাওন কই; তোমরা আমার শাওনকে এনে দাও, তারা কেন আমার শাওনকে এভাবে মেরে আমার বুক খালি করল’—ছেলেকে হারিয়ে এমন আহাজারি মা আঞ্জুমান আরার। ছেলেকে খুনের খবর শোনার পর থেকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি; জ্ঞান ফিরলেই খুঁজছেন ছেলেকে।

গতকাল বুধবার রাতে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার সেবারহাট বাজারে কিশোর গ্যাংয়ের এক পক্ষের হামলায় খুন হন কলেজপড়ুয়া মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাওন (১৮)। এর পর থেকেই মা আঞ্জুমান আরার আহাজারি থামছেই না।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেনবাগ উপজেলায় দুই বছর ধরে ‘এফ-টেন’ নামের একটি কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য চলছে। উপজেলার সেবারহাটের স্কুল, বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন দেয়ালে ‘এফ-টেন’-এর নামে রয়েছে দেয়াললিখন। প্রায়ই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় দলটি। মাজাহারুলও এই কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেখানেই আরেকটি পক্ষের সঙ্গে তাঁর বিরোধ হয়। এর জেরে তাঁর ওপর হামলা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের উত্তর রাজারামপুর গ্রামে জমাদার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের শোকে জ্ঞান হারানো আঞ্জুমান আরার মাথায় পানি ঢেলে তাঁকে সুস্থ করার চেষ্টা করছেন স্বজনেরা। জ্ঞান ফিরলেই বিলাপ করতে করতে আবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

সেখানে কথা হয় প্রতিবেশী নাছরিন আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, দুই ছেলে ও স্বামী বিদেশে থাকায় এই ছেলেই ছিল আঞ্জুমান আরার হাতের লাঠি। সেই ছেলের এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আঞ্জুমান আরার এমন অবস্থা। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী কারও সান্ত্বনাই তাঁকে শান্ত করতে পারছে না।

আঞ্জুমান আরার চার সন্তানের চারজনই ছেলে। বড় দুই ছেলে তাঁদের বাবার সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতপ্রবাসী। বাড়িতে সেজ ছেলে মাজাহারুল ইসলাম আর ছোট ছেলে মো. শায়নকে (১১) নিয়ে থাকতেন মা আঞ্জুমান আরা বেগম (৪০)। বড় দুই ভাই ও বাবার অবর্তমানে বাড়ির সবকিছু দেখভাল করতেন শাওন।

ছেলেকে খুনের ঘটনা শোনার পর থেকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা আঞ্জুমান আরা। মাথায় পানি ঢেলে তাঁকে সুস্থ করার চেষ্টায় স্বজনেরা। আজ দুপুরে

নিহত শাওনের চাচাতো ভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের হৃদয়ের নেতৃত্বে মাজাহারুলের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়। এ সময় হৃদয় চিৎকার দিয়ে বলছে—“কে সামনে আসবি আয়, এলে শেষ করে দিব”। এ কারণে ভয়ে কেউ সামনে এগোতে পারেনি।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত মাজাহারুলের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। বাদ আসর জানাজা শেষে লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নোয়াখালী জেলা পুলিশ ‍সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের তৎপরতার বিষয়ে ইতিপূর্বে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। তবে এখন যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটিকে বিশেষ গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। এই কিশোর অপরাধীদের পেছনে যাঁরা আছেন, তাঁদেরও শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এরই মধ্যে সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।