পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও বরগুনার আমতলী উপজেলায় ‘বিমানবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্য জায়গা’ পরিদর্শন করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ছয় সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মো. জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বিমানবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্য জায়গা ঘুরে দেখেন। ওই প্রতিনিধিদলে অপর সদস্যরা হলেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি) মো. হাবিবুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আহমেদ জামিল, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট) মো. শামসুল হক, পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আমিনুল হাসিব।
প্রাথমিকভাবে কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া ও গামুরবুনিয়া এবং আমতলী উপজেলার তারিকাটা ও উত্তর টিয়াখালী মৌজার সাত হাজার একর জমি বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ সময় ওই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ওবায়দুর রহমান, কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, কলাপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ, বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আবদুর রহিম তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া ও গামুরবুনিয়া এবং আমতলী উপজেলার তারিকাটা ও উত্তর টিয়াখালী মৌজার সাত হাজার একর জমি বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ এবং দুই কিলোমিটার প্রস্থের রানওয়ে নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, যে জায়গাটি প্রাথমিকভাবে বিমানবন্দর নির্মাণ করার নির্ধারণ করা হয়েছে, তার মধ্যে প্রচুর খাসজমি রয়েছে। এর বাইরে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হয়তো কিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। তা ছাড়া এলাকাটিও বিমানবন্দরের রানওয়ে করার জন্য অত্যন্ত সুন্দর। অপর দিকে জায়গাটি আমতলী ও কলাপাড়া উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে পড়েছে। এসব কারণে বিমানবন্দর করার জন্য জায়গাটি সব দিক থেকে উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে বলে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা মনে করেছেন।
২০১৯ সালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মো. মহিবুল হক জায়গাটি বিমানবন্দর করার জন্য উপযুক্ত কি না, তা যাচাই করতে পরিদর্শন করেছিলেন। তখন তিনি উপজেলা প্রশাসনকে এ জায়গার বিস্তারিত তথ্য প্রস্তুত করতে নির্দেশও দিয়েছিলেন।
বিমানবন্দর নির্মিত হলে পর্যটননির্ভর পটুয়াখালী জেলা পুরোপুরি ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে সমৃদ্ধ হবে, এ কথা উল্লেখ করে পটুয়াখালীর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন পটুয়াখালী চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘বরিশাল বিভাগের মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া। এখানে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা গড়ে উঠছে। এর পাশাপাশি শের-ই-বাংলা ত্রিমাত্রিক নৌ ঘাঁটি, পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার কোম্পানির (আরএনপিএল) ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হয়েছে।
গিয়াস উদ্দিন আরও বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ডের সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনটিও কুয়াকাটার নিকটবর্তী গোড়া আমখোলা পাড়ায় অবস্থিত। এসব এলাকায় প্রায় সময়ই দেশ-বিদেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা পরিদর্শনে আসেন। তা ছাড়া প্রকৃতির অপরূপ শোভায় শোভিত কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্র কলাপাড়া উপজেলার অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি স্থান। স্বাস্থ্যকর জায়গাটিতে প্রতিবছর বেড়াতে আসেন লাখো পর্যটক। দ্রুত এবং কম সময়ে যাতে মানুষেরা এ এলাকায় ভ্রমণ করতে পারেন, সে জন্য নতুন একটি বিমানবন্দর নির্মাণ করার প্রয়োজনীয়তা জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিমানবন্দর নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের আসার খবর শুনে কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ‘কক্সবাজারে আকাশপথে ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটায় দ্রুত পৌঁছাতে আকাশপথে এখনো সে সুবিধা গড়ে ওঠেনি। যার কারণে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কলাপাড়ায় বিমানবন্দর নির্মিত হলে সে হতাশা কেটে যাবে। এমন উদ্যোগে আমরা অত্যন্ত খুশি হয়েছি।’
বিমানবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্য জায়গা পরিদর্শন শেষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. জহিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিমানবন্দর নির্মাণের স্থান নির্ধারণের তথ্য চেয়ে ইতিমধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। চিঠি পেয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। দুটি সংস্থার পক্ষ থেকে এখন আমরা সম্ভাব্য জায়গাটি সরেজমিনে দেখতে এলাম।’
জায়গাটি বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য উপযোগী কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য আমাদের অর্থনৈতিক, পরিবেশগত দিকসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করতে হচ্ছে। বিমানবন্দর হলে এখান থেকে সফলতা কী আসবে, সেসবও বিবেচনা করা হবে। তবে বিমানবন্দর করার জন্য জায়গাটি উপযুক্ত বলে মনে হচ্ছে।’