আদালতে হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার পর টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক সহিদুর রহমান খানকে আটক করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে
আদালতে হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার পর টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক সহিদুর রহমান খানকে আটক করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে

নুরুল হকের ওপর হামলার মামলায় টাঙ্গাইলের সাবেক মেয়র সহিদুরকে গ্রেপ্তার দেখাল পুলিশ

তিন বছর আগে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকের (ভিপি নুর) ওপর হামলার ঘটনায় গত ১ সেপ্টেম্বর হওয়া মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খানকে (মুক্তি) গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। ওই মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ শুক্রবার বিকেলে তাঁকে আদালতে তোলা হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসমত আরা আগামী রোববার রিমান্ড আবেদনে শুনানির দিন ধার্য করেছেন। পরে সহিদুরকে কারাগারে পাঠানো হয়।

টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার হাজিরা দিতে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এসেছিলেন সহিদুর রহমান। হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে বিকেলে আদালত এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে সদর থানা–পুলিশ। সহিদুর রহমান খান টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের ছেলে এবং ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান ওরফে রানার ভাই।

টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহম্মদ জানান, ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হকসহ গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা টাঙ্গাইলের সন্তোষে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর কবরে শ্রদ্ধা জানাতে যান। এ সময় তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রায় তিন বছর পর গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান বাদী হয়ে ১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় সহিদুর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

মামলার এজাহারে সহিদুর রহমানের নাম ছিল না বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। হামলার ঘটনার সময় কারাগারে ছিলেন টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহিদুর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলায় সহিদুরের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি বের হয়ে আসে। এরপর তিনি আত্মগোপন করেন। দীর্ঘদিন পর ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠান। পরে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জামিন পেলেও পরে সেই জামিন বাতিল করেন আদালত। এরপর ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে ২২ নভেম্বর কারামুক্ত হন তিনি। পরে আদালত তাঁর জামিন বাতিল করলে পরদিনই আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যান। গত ২৮ আগস্ট তিনি আবার জামিন পান।

আদালত সূত্র জানায়, ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় সহিদুর রহমান গত ২২ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে স্থায়ী জামিন লাভ করেন। পরে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার মামলার ধার্য তারিখে তিনি অ্যাম্বুলেন্সে করে আদালতে আসেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাজিরা শেষে তাঁকে দুপুর ১২টার দিকে হুইলচেয়ারে করে আদালত কক্ষ থেকে বের করা হয়। এ সময় তাঁরা আদালত চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পান। পুলিশ এর আগেই সহিদুরকে বহন করে আনা অ্যাম্বুলেন্সটি আদালত ভবনের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। পরে সহিদুর আবার আদালত কক্ষে ফিরে যান।

বিকেল সোয়া তিনটার দিকে তিনি আবার হুইলচেয়ারে করে আদালত কক্ষ থেকে বের হন। এ সময় সদর থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য তাঁকে ঘিরে ধরেন। এ সময় ওসি তানভীর সহিদুরকে পুলিশের আনা মাইক্রোবাসে উঠতে বলেন। সহিদুর এ সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে কি না জানতে চান। পুলিশ তাঁকে আটকের কথা বলে। কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে জিজ্ঞাসা করলে ওসি তানভীর সহিদুরকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে চলেন, সব জানানো হবে।’