গরু বিক্রি করতে না পেরে হতাশ চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের গৃহস্থ আব্দুল ওয়াহাব
গরু বিক্রি করতে না পেরে হতাশ চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের গৃহস্থ আব্দুল ওয়াহাব

সন্দ্বীপে গরুর দাম পড়েছে ৮ থেকে ২০ হাজার

কোরবানির পশুর হাটে বিক্রির জন্য তিন মাস আগে দুটি গরু কিনেছিলেন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সন্তোষপুরের বাসিন্দা মো. ইউছুফ (৫০)। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় হাটে গরু দুটি বিক্রি করেন তিনি। কেমন দাম পেলেন জানতে চাইলে ইউছুফ বলেন, ‘গরু দুটির একটি ৭৪ হাজার টাকা এবং অন্যটি ৮২ হাজার টাকায় কিনেছিলাম। দুটি গরু কেনা দামেই বিক্রি করতে হয়েছে। নিজের পরিশ্রমের কথা বাদ দিলাম, ভুসি-কুঁড়ার ১০ হাজার টাকাও তুলতে পারিনি। ভবিষ্যতে আর গরু পালন করব না।’

মো. ইউছুফের মতো চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে কোরবানির পশু বিক্রি করে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ার অভিযোগ বেশির ভাগ বিক্রেতার। তাঁদের দাবি, এবার বাজারে কোরবানির পশুর তুলনায় চাহিদা অনেক কম। অনেক মানুষ এককভাবে পশু কেনার পরিবর্তে ভাগে কোরবানি দেওয়ার দিকে ঝুঁকেছেন, এ কারণে পশুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সন্তোষপুরের আরেক বাসিন্দা জসিম উদ্দিন (৫৬) তিনটি ষাঁড় নিয়ে সাত দিন ধরে হাটে যাচ্ছেন, একটি ষাঁড়ও বিক্রি করতে পারেননি তিনি। হতাশ জসিম আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই অবস্থা হলে গরু পালন আর সম্ভব হবে না। গতবারের তুলনায় প্রতিটি গরুতে ১৫-২০ হাজার টাকা কম দাম উঠেছে। হাট আছে আর দুইটা। যে দাম চাওয়া হচ্ছে, তাতে বিক্রি না করে গরু রেখে দেওয়াই ভালো।’

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে উপজেলার নতুনবাজার আকবর হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাট ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে জমজমাট। কোরবানির পশু কিনতে আসা লোকজন কোনো পশু পছন্দ হলে দরদাম করছেন। বিক্রেতারা দাম পাচ্ছেন না জানালেও ক্রেতাদের দাবি, এখনো দাম পড়েনি।

একই দিন গাছুয়া হক সাহেবের বাজারের গরুর হাটে গিয়ে কথা হয় আমানউল্লা ইউনিয়ন থেকে আসা পশু ব্যবসায়ী মো. বাবলুর সঙ্গে। তিনি বলেন, চারটি গরু বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছিলেন। দুটি বিক্রি হয়েছে, বাকি দুটি বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন। দুটি গরু বিক্রিতে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার আকবরহাট থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় ষাঁড় দুটি কিনেছিলাম। বিক্রি করেছি তিন লাখ টাকায়। ২০ বছর ধরে গরুর ব্যবসা করছি, এবারের মতো খারাপ অবস্থা হয়নি।

একই হাটে আবদুল ওয়াহাব নামের এক বিক্রেতা বলেন, তাঁর ঘরে লালন–পালন করা দুটি গরুর একটি বিক্রয় করেছেন। গত মঙ্গলবারের হাটে ৮০ হাজার টাকা দাম উঠেছিল গরুটির, কিন্তু শুক্রবার বিক্রি করতে হয়েছে ৭২ হাজার টাকায়।

আজ শনিবার সন্দ্বীপ পৌরসভার নাজিরহাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটের চারটি প্রবেশপথে গরু নিয়ে সারি বেঁধে প্রবেশ করছেন বিক্রেতারা। এ সময় মো. ইসলাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে ১৩টি গরু কিনে বিক্রয় করেছেন তিনি। প্রতিটি গরুতে তাঁর ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরুপ্রতি ৮ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। অনেকে হাটে গিয়ে গরু কেনার ঝক্কি থেকে বাঁচতে এলাকা থেকে গরু কিনে নিচ্ছেন। হাটে মানুষ কম থাকার প্রভাবও দামে পড়েছে।

বাউরিয়া ইউনিয়নের আমীর হোসেন বলেন, তিনি এবারের কোরবানির জন্য তিনটি গরু বিক্রয়ের প্রস্তুতি নিলেও দুটি বাজারে তোলার আগেই নিজের এলাকাতেই বেচে দিয়েছেন। এতে তিনি বাজারের তুলনায় ভালো দাম পেয়েছেন। এখন একটি গরু নিয়ে হাটে হাটে ঘুরেও কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না।

সন্দ্বীপ পৌরসভার বাসিন্দা শাহীন উল্লা (৩১) বাজার থেকে একটি ষাঁড় কেনে ১ লাখ ২৩ হাজার টাকায়। দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্রেতার চাহিদার তুলনায় বাজারে অনেক বেশি গরু আছে, তবে দাম পড়েনি।

নতুনবাজার আকবরহাটের ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার হাটবার হওয়ায় সন্দ্বীপের ৮০ ভাগ পরিবার এদিন গরু কিনে নিলেও বাজারে গরুর কমতি নেই। আকবরহাটে যে পরিমাণে গরু উঠেছে, এর মধ্যে ৫ ভাগের ৪ ভাগই রয়ে গেছে।