ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার প্রধান নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও দুধকুমার নদের পানি তিন দিন থেকে বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। পানি সমতলে কমলেও এসব নদ-নদী অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাঁদের।
কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, আজ রোববার সকাল ৯টায় দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার এবং তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। জেলার নদ-নদীগুলোর পানি কমতে শুরু করলেও বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ৯টি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের ১৮৫ গ্রামের ২০ হাজার পরিবারের মধ্যে ৫৬ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। এ ছাড়া জেলার ৪২০টি চরের অধিকাংশ চরে পানি উঠেছে। চরের নিম্নাঞ্চল ও বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চরের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘বানের আগত ব্রহ্মপুত্র ভিটে খাইছে। ঘর দুইটা নিয়ে কোনো রকম মানুষের জাগাত আসি বাড়ি তুলি আছি। ভিটায় মাটি কাটবার পারি নাই। তিন দিন থাকি ঘরত পানি। আলগা (তোলা) চুলায় কষ্ট করে একবেলা রান্না করে তিন বেলা খাই।’
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, কুড়িগ্রামের নদ-নদী পানি উজানে কমলেও ভাটির দিকে উলিপুর উপজেলা ও চিলমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আগামী দুই দিনে বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁচ্ছে স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে ১৮-১৯ জুলাই পানি সমতলে কমতে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় উলিপুর উপজেলা ও চিলমারী উপজেলার সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জ ও নয়ারহাট ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে সাময়িক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তবে আগামী দুই সপ্তাহে এসব অঞ্চলে বড় কোনো বন্যা আশঙ্কা নেই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ প্রথম আলোকে বলেন, জেলার ৯টি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের ১৮৫টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৫৬ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ইতিমধ্যে ২৭৫ মেট্রিক টন চাল ও ৯ লাখ নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যার্ত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বরাদ্দ অব্যাহত রয়েছে।