বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে, চিকিৎসা ব্যাহত

হাসপাতালটিতে বৃষ্টির দিনে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী, চিকিৎসকসহ সেবাপ্রার্থীদের।

করোনা মহামারি শুরুর পর সিলেট বিভাগের মধ্যে প্রথম শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়। এরপর দুই বছর ধরেই হাসপাতালটিতে চলছে করোনা রোগীদের চিকিৎসা। তবে হাসপাতালটিতে বৃষ্টির দিনে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী, চিকিৎসকসহ সেবাপ্রার্থীদের। বৃষ্টি হলেই ছাদ থেকে পানি চুইয়ে পড়ে হাসপাতালের অভ্যন্তরে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১০০ শয্যার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে মানুষের আস্থা ও ভরসার স্থল হিসেবে কাজ করেছে। তবে হাসপাতালটি অবহেলিতই রয়ে গেছে। হাসপাতালে বৃষ্টির দিনে ছাদ থেকে পানি চুইয়ে পড়ে। এতে রোগী ও সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও চিকিৎসাসেবা দেওয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। এ নিয়ে একাধিকবার মৌখিকভাবে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে জানানো হলেও মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে চিঠি দেন হাসপাতালটির অধীক্ষক এবং সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পরিচালক। বরাদ্দ না থাকার কথা জানিয়ে সেটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এদিকে প্রায় ছয় মাস ধরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রসহ (আইসিইউ) হাসপাতালের ১৩টি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মধ্যে ১০টি বিকল হয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বরাদ্দ না থাকার অজুহাতে ওই ১০টি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছয় মাসেও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হন। অবশেষে গতকাল শুক্রবার বিকেলের দিকে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলো মেরামতের উদ্যোগের কথা জানা গেছে।

হাসপাতালে গতকাল বিকেল চারটার তথ্য অনুযায়ী, আইসিইউতে চারজন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর মধ্যে চারজন করোনায় আক্রান্ত এবং দুজন করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে জানানো হলে তারা বরাদ্দ না থাকার অজুহাতে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এর মধ্যে অন্যতম হাসপাতালের ছাদ বেহাল। সামান্য বৃষ্টিতেই ছাদ থেকে পানি চুইয়ে পড়ে।

শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলো মেরামত করার কথা একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হলেও সেটির কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে অবশেষে শুক্রবার বিকেলের দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলো মেরামতের জন্য লোক পাঠানো হয়েছে।

ওই চিকিৎসক বলেন, করোনা ইউনিট চালুর পর সংক্রমণের কারণ দেখিয়ে মেরামতের উদ্যোগ বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে চলতি বছরের প্রথম দিকে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন আবার বরাদ্দ না থাকার কথা বলে মেরামত বন্ধ রাখা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা ঠান্ডা বাতাস খাওয়ার জন্য শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলো মেরামতের কথা বলিনি। হাসপাতালের সেবাপ্রার্থী এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতির কারণে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালু করে রাখতে হয়। সেটি না হলেও সেসব যন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’ তিনি বলেন, হাসপাতালটি একপ্রকার অবহেলায় পড়ে থাকে। বৃষ্টি হলে ছাদ থেকে পানি পড়ে স্যাঁতসেঁতে অবস্থা তৈরি হয়। যদিও কয়েক দিন ধরে সিলেটে তেমন বৃষ্টি হয়নি। এর মধ্যে আইসিইউর সেবাপ্রার্থীরা শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র না থাকায় ভোগান্তিতে রয়েছেন।

হাসপাতালের অধীক্ষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা একাধিকবার ভবনটি মেরামতকাজের জন্য বলেছি। লিখিতভাবেও জানিয়েছি। তবে বরাদ্দ না থাকার কথা বলে সেটি বিলম্বিত করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসাসেবায় ব্যাঘাত ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার স্বাস্থ্য প্রকৌশলের প্রধান প্রকৌশলী এবং সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে সর্বশেষ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, তাঁরা ভবনটি মেরামতের জন্য একটি প্রাক্কলন পাঠিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানোর পর প্রায় ছয় মাস পর শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুর রহমান বলেন, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলো মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। হাসপাতালে দুটি পাঁচ টনের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র রয়েছে। সেগুলো দিয়ে আপাতত আইসিইউর সচল রাখা হয়েছে।

বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়া প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতাল ভবনটি পুরোনো হওয়ায় কিছু সমস্যা রয়েছে। ভবনটি মেরামতের জন্য একটি বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রাক্কলন পাঠিয়েছি। সেটি পাস হয়ে আসার পর দ্রুত মেরামতকাজ শুরু করব।’