ফার্মের মুরগির ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিমের সর্বোচ্চ দাম হওয়ার কথা ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা। তবে রাজবাড়ীতে ভোক্তাদের বেশি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। গতকাল বুধবার খুচরা পর্যায়ে আকারভেদে প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৪৪ থেকে ১৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খামার থেকে পাইকারেরা ডিম কেনেন। সাধারণত বড়, মাঝারি ও ছোট—এই তিন আকারভেদে ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়। পাইকারদের কাছ থেকে ডিম কেনেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দোকানিরা ডিম কিনে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করেন।
খামারিদের অভিযোগ, পাইকারেরা ছোট আকারের ডিম কম দামে কিনে তা মাঝারি বা বড় আকারের ডিমের দামে বিক্রি করছেন। প্রতিটি ডিমে ১০ পয়সা করে লাভ করার কথা থাকলেও পাইকারেরা ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা করে বিক্রি করছেন। এতে খামারিরা কম দাম পাচ্ছেন; ভোক্তারাও প্রতারিত হচ্ছেন।
গতকাল জেলার বিভিন্ন খামারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খামার থেকে প্রতিটি বড় বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৪০ পয়সায় (প্রতি ডজন ১৪৬–১৪৯ টাকা) দরে। পাইকারেরা পরিবহন খরচ ও লাভ রেখে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন ১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৭০ পয়সা (প্রতি ডজন ১৫০–১৫২ টাকা) দরে। দোকানিরা ভোক্তাদের কাছে ২০–৩০ পয়সা লাভে বিক্রি করছেন ১২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১৩ টাকায় (প্রতি ডজন ১৫৩–১৫৬ টাকা)
মাঝারি আকারের প্রতিটি ডিম পাইকারেরা কিনেছেন ১২ টাকায় (প্রতি ডজন ১৪৪ টাকা)। তাঁদের কাছ থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কিনেছেন ১২ টাকা ২০ পয়সা দরে (প্রতি ডজন ১৪৬ টাকা)। দোকানিরা ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন ১২ টাকা ৪০ থেকে ১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে (প্রতি ডজন ১৪৯–১৫০ টাকা)। এ ছাড়া ছোট আকারের প্রতিটি ডিম পাইকারেরা কিনছেন ১০–১১ টাকা দরে। পরে তাঁরা এই ডিম এক থেকে দেড় টাকা লাভে বিক্রি করছেন।
সদর উপজেলার বাগমারার খামারি সামির আহম্মেদের খামারে প্রায় ১০ হাজার লেয়ার মুরগি আছে। গড়ে প্রতিদিন ৮ হাজার ডিম উৎপাদিত হয়। সামির আহম্মেদ বলেন, পাইকারেরা ডিমের যে দাম ধরছেন, ওই দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। বড় ডিম থেকে মাঝারি আকারের ডিম গড়ে ৫০–৬০ পয়সা কমে ও ছোট ডিম বড়টি থেকে অন্তত ১ টাকা কম দরে পাইকারেরা কিনছেন। অথচ ছোট ডিম পাইকারেরা ভোক্তাদের কাছে মাঝারি হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছেন।
গোয়ালন্দের মৃধাডাঙ্গা এলাকার খামারি মোক্তার হোসেন খান বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় ডিমের জোগানদাতা কাজী ফার্ম প্রতিটি ডিম ১১ থেকে সাড়ে ১১ টাকায় ডিলারদের কাছে বিক্রি করছেন। অথচ এ অঞ্চলের ডিলার বা পাইকারেরা বাজারে প্রতিটি ডিম এক থেকে দেড় টাকা লাভে বিক্রি করছেন। তাঁরা প্রতিদিন যে দরে বিক্রি করছেন, আমাদের সেই দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
মোক্তার হোসেন আরও বলেন, তাঁর খামারে সাড়ে ১১ হাজার মুরগি আছে। প্রতিদিন সাড়ে ৮ হাজার ডিম পাওয়া যায়। স্থানীয় পাইকারেরা প্রতিটি ছোট ডিম ১০–১১ টাকায় কিনছেন। ফাটা–ছিদ্র ডিম নামমাত্র দাম দেন। অথচ পাইকারেরা এসব ডিম মাঝারি আকারের ডিমের সঙ্গে বিক্রি করে বেশি লাভ করেন।
পাইকারেরা প্রতিটি ছোট ডিম ১০–১১ টাকায় কিনছেন। ফাটা–ছিদ্র ডিম নামমাত্র দাম দেন। অথচ পাইকারেরা এসব ডিম মাঝারি আকারের ডিমের সঙ্গে বিক্রি করে বেশি লাভ করেন।মোক্তার হোসেন, খামারি
খামারিদের এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন জেলার পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে কথা হয় রাজবাড়ী শহরের অন্যতম পাইকার বিসমিল্লাহ ডিম আড়তের মালিক হাবিব উল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, মুরগি ডিম দেওয়া শুরু করার প্রথম দু-তিন সপ্তাহ আকারে ছোট হয়। পরে ডিমের আকার বড় হয়ে যায়। ছোট ডিম বেশি থাকে না। পাইকারেরা সাধারণত বড় ডিমের দাম নির্ধারণ করেই খামারিদের সঙ্গে কথা বলে থাকেন। এরপর পরিস্থিতি বুঝে মাঝারি বা ছোট ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়।
হাবিব উল্লাহ আরও বলেন, ডিমের দাম পাইকারেরা নির্ধারণ করেন। আবার খামারিরাও দাম নির্ধারণ করেন। কারণ, খামারিরা যাচাই–বাছাই করেই ডিম বিক্রি করেন। এখন বেশি লাভবান হচ্ছেন কাজী ফার্মের ডিলাররা। প্রতিষ্ঠানটি সরকার নির্ধারিত দাম হিসেবে প্রতিটি ডিম ১১ দশমিক ১০ টাকা দরে ডিলারকে দিচ্ছেন। তবে ডিলাররা খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিম ১২ টাকা থেকে ১২ দশমিক ১০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
ডিম মজুত করার অভিযোগ সম্পর্কে হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘ইচ্ছা করে ডিম মজুত করা হয় না। বাজারে ডিমের চাহিদা যখন কম থাকে, তখন আমার কাছে কিছু মজুত হয়।’