ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের খেলার মাঠ নষ্ট করে স্থাপনা নির্মাণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার সকালে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে স্কুল চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। স্কুলের খেলার মাঠটি বাঁচাতে চান প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
প্রায় ১৭০ বছরের পুরোনো ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে সেখানে নতুন একটি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সেখানে কাজ শুরু হওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। নির্মিতব্য ভবনের জন্য মাঠে খুঁটি স্থাপন করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ শুরু করেন। নতুন ভবনটি স্কুল মাঠের অনেকটা জায়গা চলে যাবে।
স্কুলের খেলার মাঠ বাঁচাতে আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় স্কুল মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে ১৯৭১ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র ও ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এক্স-স্টুডেন্টস স্পোর্টস ক্লাবের উপদেষ্টা শেখ আমজাদ আলী, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এক্স-স্টুডেন্টস স্পোর্টস ক্লাবের সভাপতি ১৯৮৪ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র ও ফুটবল কোচ মারুফুল হক ফেরদৌস, ক্লাবের সদস্য ১৯৮৭ ব্যাচের শামিম আজাদ, ১৯৮৭ ব্যাচের এ কে এম মাহবুবুল আলম, ১৯৮৯ ব্যাচের মোজাম্মেল হক, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এক্স-স্টুডেন্টস স্পোর্টস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি ১৯৯১ ব্যাচের এমদাদ উল্লাহ রাজু, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এক্স-স্টুডেন্টস স্পোর্টস ক্লাবের ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভাপতি রোকনুজ্জামান সরকার, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল এক্স-স্টুডেন্টস স্পোর্টস ক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারি ১৯৯৫ ব্যাচের আরিফ চৌধুরী রাসেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের খেলার মাঠটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী। এই মাঠে ১৯১৮ সাল থেকে লীলাদেবী শিল্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, যা বাংলাদেশের অন্যতম পুরোনো ফুটবল টুর্নামেন্ট। এই মাঠ থেকেই দেশ-বিদেশের অনেক খ্যাতিমান ফুটবলার ও ক্রিকেটারের খেলার হাতেখড়ি হয়েছে। ভবন নির্মাণের এই পরিকল্পনা শুধু ঐতিহাসিক একটি মাঠ ধ্বংস করবে না, বরং স্কুলের ক্রীড়াঙ্গনের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করবে।
প্রতিবাদ সমাবেশে ১৯৭১ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৪৫টি ব্যাচের ছাত্ররা অংশ নেন। সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্কুলের মাঠ রক্ষায় ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন প্রতিবাদকারীরা।
ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিমা রানী সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুলের বর্তমান ভবনটি বহু পুরোনো হওয়ায় বৃষ্টিতে ছাদ চুয়ে পানি পড়ে, মাঠে পানি জমে শ্রেণিকক্ষে চলে যায়। শ্রেণিকক্ষেরও সংকট রয়েছে। ওই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন একটি ভবন খুবই জরুরি। ২০১৭ সাল থেকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করে। স্থান নির্ধারণ সে সময়ই হয়। ১০২ ফুট লম্বা ও ৩২ ফুট চওড়া ভবন সব বিভাগীয় শহরে একই নকশায় হওয়ার কথা। সম্প্রতি কার্যাদেশ পেয়ে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ কাজ শুরু করতে এলে দেখা যায়, স্কুল মাঠের অনেকটা জায়গা চলে যায়। একই সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও এটির বিরোধিতা শুরু করেন। সে কারণে কাজটি বন্ধ রাখতে প্রকৌশল বিভাগকে আমরা বলেছি। এটি নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশের প্রয়োজন ছিল না, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানে আসা যেত। শিক্ষার্থীদের জন্য যা কল্যাণকর, আমরা সেটাই করব। বিকল্প জায়গায় করতে গেলে আমাদের আরও ৫-৭ বছর সময় লেগে যাবে।’