নতুন গৃহকর নিয়ে আপত্তি থাকলে ভুক্তভোগীরা জানাতে পারবেন।
আপত্তি জানাতে ১৫ হাজার ভবনমালিক ফরম সংগ্রহ করেছেন।
এক লাফে কেন এত গৃহকর বাড়ল, অনেকেই বুঝতে পারছেন না।
সিলেট নগরে নতুন করে যে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে, তা ‘অযৌক্তিক, গণবিরোধী ও অন্যায্য‘’ বলে দাবি করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন কদিন ধরে সভা, সমাবেশ ও মানববন্ধনের পাশাপাশি বিবৃতি দিয়ে আসছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এমন গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে সিটি কর্তৃপক্ষকে বিরত থাকার আহ্বানও জানাচ্ছেন তাঁরা।
এর আগে পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়নের পর গত ৩০ এপ্রিল থেকে সিটি করপোরেশন নতুন নির্ধারিত বার্ষিক গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) অনুযায়ী ভবনমালিকদের গৃহকর পরিশোধের নোটিশ দেওয়া শুরু করে। এরপর নগরের প্রায় পৌনে এক লাখ ভবনমালিকের গৃহকর ৫ থেকে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
প্রায় পৌনে এক লাখ ভবনমালিকের গৃহকর ৫ থেকে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
গৃহকর বাড়ানোর পরপরই নগরের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন শুরু করেছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সমালোচনা করছেন। এ ছাড়া গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৫ হাজার ১৪৯ জন ভবনমালিক গৃহকর নিয়ে আপত্তি জানাতে আবেদন ফরম সিটি করপোরেশন থেকে সংগ্রহ করেছেন।
এদিকে গতকাল দুপুরে নগরের কিনব্রিজ এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নতুন গৃহকর নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘গৃহকর নিয়ে যদি কোনোরূপ অসংগতি কিংবা অমিল পাওয়া যায়, অবশ্যই ফরম-ডি-এর মাধ্যমে আপত্তি জানিয়ে আবেদন করার ব্যবস্থা রয়েছে। জনগণের ভোগান্তি বা কষ্ট হয়, এমন কোনো কাগজে আমি স্বাক্ষর করব না। বিষয়টিও নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাব।’
ভুক্তভোগীদের আবেদন
করপোরেশনের রাজস্ব শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ সালে মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান শেষে হোল্ডিং সংখ্যা পুনর্নির্ধারিত হয়। এতে পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে হোল্ডিং নির্ধারিত হয় ৭৫ হাজার ৪৩০টি। এসবের গৃহকর আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১১৩ কোটি ২৭ লাখ ৭ হাজার ৪০০ টাকা। নতুন গৃহকর ধার্যের সময় ধরা হয় ২০২১-২২ সাল। সেই করারোপের তালিকাই ৩০ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়েছে। তবে নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ১৫টি ওয়ার্ডের হোল্ডিং ওই তালিকায় আসেনি।
সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, নতুন গৃহকর নিয়ে আপত্তি থাকলে ১৪ মে পর্যন্ত ভুক্তভোগীরা নির্ধারিত ‘ডি-ফরম’ পূরণ করে আপত্তি জানাতে পারবেন। পরে রিভিউ বোর্ডে শুনানির মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করা হবে।
এদিকে গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নগর ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবন প্রাঙ্গণে স্থাপিত বুথে হাজারো মানুষ গৃহকর নিয়ে নিজেদের আপত্তি জানাতে জড়ো হয়েছেন। অনেকে ‘ফরম-ডি’ সংগ্রহ করে পূরণ করে নির্ধারিত বুথে জমা দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পুরো প্রক্রিয়াটি অন্যদের কাছ থেকে জেনে নিচ্ছেন। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত স্থাপিত অস্থায়ী বুথগুলোতে ভুক্তভোগীদের আপত্তি-সংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ করা হয়।
ভুক্তভোগী ১২ জন ভবনমালিকের সঙ্গে প্রথম আলোর এ প্রতিবেদকের আলাপ হয়। তাঁরা জানান, সিটি করপোরেশনের মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধান যথাযথভাবে হয়নি। পুনর্মূল্যায়নের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তাঁদের আবাসিক কাঁচা, আধা পাকা ভবনের আয়তন ও ধরন আগের মতো থাকলেও তাঁদের ১০ থেকে ৫০ গুণ গৃহকর বেড়েছে। এক লাফে কেন তাঁদের গৃহকর এতটা বাড়ানো হলো, তাঁরা বুঝতে পারছেন না।
প্রতিবাদ, বিবৃতি
সিটি করপোরেশনের নতুন গৃহকর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে অভিহিত করে বিবৃতি দিয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি। গতকাল সকালে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এতে অবিলম্বে ‘অস্বাভাবিক কর’ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
সোমবার রাতে নগরের জিন্দাবাজার এলাকার সিলেট নজরুল একাডেমিতে সিলেটের প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও ভুক্তভোগী নাগরিকবৃন্দের ব্যনারে মতবিনিময় সভা হয়। এতে গণতন্ত্রী পার্টি সিলেটের সভাপতি মো. আরিফ মিয়া সভাপতিত্ব করেন। এ ছাড়া গত সোমবার রাতে নগরের ভাতালিয়া এলাকায় সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকীর বাসভবনে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে পৃথক আরেকটি মতবিনিময় সভা হয়। নতুন গৃহকর বাতিলের দাবিতে গত রোববার বাসদ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।