দিনাজপুরের আশুড়ার বিলের কাঠের সেতু পাঁচ দিন ধরে পানির নিচে, দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আশুড়ার বিলে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া কাঠের সেতু। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আশুড়ার বিলের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কাঠের সেতু ডুবে গেছে। এতে করে সেতু ও আশুড়ার বিল এখন পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে কাঠের সেতু ও আশুড়ার বিলকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করা অর্ধশতাধিক দোকানদার ও নৌকার মাঝি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২১ সেপ্টেম্বর থেকে বৃষ্টির কারণে নলশীসা নদীর পানি বেড়ে যায়। এতে করে নদীর পানি প্রবেশ করে আশুড়ার বিলটি প্লাবিত হয়। গত সোমবার সকালে বিলের ওপর থাকা প্রায় ৯০০ মিটার দীর্ঘ ‘জেড’ আকৃতির কাঠের সেতুটি ডুবে যায়। এর পর থেকে আশুড়ার বিল ও বিলে থাকা কাঠের সেতুতে দর্শনার্থীদের চলাচল অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয় শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান রক্ষা কমিটি।

আশুড়ার বিলের তিন দিকে রয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শালবন। শালবন ঘেরা আশুড়ার বিলের আয়তন ৮৫৭ দশমিক ৪৫ একর। এর মধ্যে ৫৮৮ দশমিক ২২ একর পড়েছে নবাবগঞ্জ উপজেলায়। বাকি অংশ বিরামপুর উপজেলায়।

শালবন ঘেরা আশুড়ার বিলের বেশি অর্ধেক পড়েছে নবাবগঞ্জ উপজেলায়। বাকি অংশ বিরামপুর উপজেলায়

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিলের পূর্ব-দক্ষিণ পাশে সবগুলো দোকান ডুবে গেছে। এ ছাড়া কাঠের সেতুটি ডুবে যাওয়ায় সেতুর উত্তর-পশ্চিম পাশে বিলসংলগ্ন ফুচকা, চটপটি ও খাবারের দোকানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।

কাঠের সেতুর পশ্চিম পাশের ফুচকা বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার থেকে এখানে তেমন দর্শনার্থী আসছেন না। ফলে দোকানপাটও প্রায় বন্ধ। সারাদিনে ৫০ থেকে ৬০ দর্শনার্থী বিলে এলেও সেতুতে উঠতে পারায় তাঁরা নৌকায় ঘুরে চলে যান। তাঁর মতো স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে।

বিলে চলাচল করা নৌকার মাঝি নাসির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, সেতু ডুবে যাওয়ায় এখানে আসা লোকজনের সংখ্যা কমে গেছে। যে কয়জন আসেন, বিলে বেশি পানি থাকায় তাঁদের অনেকে নৌকায় উঠতে ভয় পান। বিলের পূর্ব পাড় থেকে পশ্চিম পাড়ে নৌকা পারাপার করতে জনপ্রতি ৫০ টাকা করে নৌকা ভাড়া নিচ্ছেন।

নবাবগঞ্জ শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পানি না কমা পর্যন্ত আশুড়ার বিলে ও কাঠের সেতুতে দর্শনার্থীদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে বিলের পাড়ে বসবাস করা কিছু অবৈধ দখলদার প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই দর্শনার্থীদের নৌকায় করে ভ্রমণ করাচ্ছেন। দর্শনার্থীরা যেন আশুড়ার বিলে ঝুঁকি নিয়ে নৌকা ভ্রমণ না করেন, সে জন্য আজ শুক্রবার বিলের চারিদিকে জনসচেতনতামূলক পোস্টার ও ব্যানার লাগানো হবে।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম এম আশিক রেজা প্রথম আলোকে বলেন, বিলে নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই দর্শনার্থীদের নৌকায় করে ভ্রমণ করানোর বিষয়টি জানা ছিল না। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।