শিশির সরকার
শিশির সরকার

মাগুরায় ১৩ বছর বেতন তুলেছেন কিন্তু ক্লাস নেননি 

শিক্ষক শিশির এলাকায় পরিচিত ছিলেন মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে। 

মাগুরায় এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্লাস না করিয়ে ১৩ বছর ধরে বেতন তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষকের নাম শিশির সরকার। শিশির এলাকায় বেশি পরিচিত ছিলেন মাগুরা-২ আসনের (শালিখা, মহম্মদপুর ও সদরের একাংশ) সাবেক সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে। 

শিশির শালিখা উপজেলার অভয়াচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি)। তবে এ বিষয়ে শিশিরের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার পর কখনো নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেননি ওই শিক্ষক। প্রায় সব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সাবেক সংসদ সদস্যের সঙ্গে দেখা যেত শিশিরকে। সংসদ সদস্যের সঙ্গে তাঁর সখ্য থাকায় কেউ বিষয়টি নিয়ে এত দিন কথা বলতে পারেননি। 

 গত বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষক শিশির সরকার অনুপস্থিত। প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, সর্বশেষ গত ৬ আগস্ট বিদ্যালয়ে এসেছিলেন শিশির। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ওই দিন দুই মাসের ছুটির দরখাস্ত দেন তিনি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে ছুটির অনুমোদন দিয়েছে। 

প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১২ মার্চ ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন শিশির সরকার। এর পর থেকে নিয়মিত বেতন তুলেছেন। সর্বশেষ আগস্ট মাসের বেতনও পেয়েছেন শিশির।   

ওই শিক্ষকের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, শিশির সরকার নামের একজন শিক্ষককে তারা চেনে। কিন্তু গত ৪ বছরে তাঁর কোনো ক্লাস পায়নি। 

উপজেলার আসবা বরইচারা গ্রামে ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত অভয়াচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩১০। এর বিপরীতে শিক্ষক আছেন শিশির সরকারসহ ১৬ জন। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, শিশির কখনো নিয়মিত পাঠদান করাননি। বছরের পর বছর নানাভাবে বিষয়টি ‘ম্যানেজ’ করে আসছেন।    

প্রধান শিক্ষক মমতা মজুমদার বলেন, তিনি (শিশির সরকার) মাঝেমধ্যে স্কুলে আসতেন বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নারায়ণ বরকে সঙ্গে নিয়ে। সভাপতিকে সামনে বসিয়ে তিনি হাজিরা খাতায় এক মাসের স্বাক্ষর করে চলে যেতেন। সাবেক সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন শিশির। তাই তাঁকে তিনি কখনো কিছু বলতে সাহস পাননি। তবে তিনি পরিচালনা পর্ষদকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। 

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত তিন মেয়াদে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হন আসবা গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণ বর। সরকার পতনের পর কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্যের প্রভাব খাটিয়ে প্রতিবারই নারায়ণ বরকে সভাপতি নির্বাচিত করেছেন শিশির। এ কারণে এ বিষয়ে আর কেউ কথা বলতেন না। 

বৃহস্পতিবার সদ্য সাবেক সভাপতি নারায়ণ বরের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তিনি কয়েক দিন আগে চিকিৎসার জন্য ভারত গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর স্বজনেরা।

এ বিষয়ে কথা বলতে গতকাল শনিবার শিক্ষক শিশির সরকারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। ওই দিন থেকে বীরেন আত্মগোপনে রয়েছেন। এ কারণে তাঁর বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। 

জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর কবির শনিবার মুঠোফোনে বলেন, ‘শিশির সরকার যে ক্লাস না করিয়ে বেতন তুলেছেন, এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মমতা মজুমদার গত বৃহস্পতিবার লিখিত আকারে আমাদের জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে এর আগে কেউ আমাদের অভিযোগ করেননি।’ তিনি আরও জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছে শিক্ষা অফিস। পাশাপাশি এ অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।