গোপালগঞ্জে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলার কারাবন্দী আসামি আলিমুজ্জামান চৌধুরীর (৫০) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। গোপালগঞ্জ জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
আলিমুজ্জামান চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কল্যাণ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়ার বাসিন্দা।
আলিমুজ্জামানের শ্যালক নাদিম চৌধুরী বলেন, গতকাল সকালে কারা কর্তৃপক্ষ আলিমুজ্জামনের অসুস্থতার কথা পরিবারকে জানায়। পরে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। আগে তাঁর শারীরিক কোনো সমস্যা ছিল না। গত ১৩ সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর গাড়িবহরে হামলার দিন তিনি অসুস্থ হন। এ ঘটনায় দুই দিন পর আলিমুজ্জামান থানায় মামলা করতে গেলে তাঁর মামলা না নিয়ে পুলিশ উল্টো তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশ অবশ্য আলিমুজ্জামনকে তাঁর গ্রাম ঘোনাপাড়া থেকে গ্রেপ্তার দেখায়।
গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার তানিয়া জামান প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর আলিমুজ্জামান চৌধুরীকে কারাগারে আনা হয়। তাঁর উচ্চ রক্তচাপ ছিল। গতকাল কারাগারে তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) হয়। তাঁকে প্রথমে গোপালগঞ্জ শেখ সায়রা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।
গোপালগঞ্জের শেখ সায়রা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, গতকাল সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে একজন কারাবন্দীকে ভর্তি করা হয়। তখন তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন। তাঁকে এক ঘণ্টা চিকিৎসা দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাঁকে ফরিদপুর পাঠানো হয়।
১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রামে অনুষ্ঠিত এক পথসভা শেষে নিজ গ্রাম টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সদর উপজেলা ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌঁছালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা মাইকিং করে দেশি অস্ত্র নিয়ে গাড়িবহরে হামলা করেন। এতে জিলানীসহ সংগঠনের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন। ভাঙচুর করা হয় ১০টি গাড়ি। ঘটনাস্থলের কাছে পাথালিয়া বাংলালিংক টাওয়ারের পাশ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শওকত আলীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে নিহত শওকত আলীর স্ত্রী রাবেয়া রহমান (৩২) বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমসহ ১১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলায় আলিমুজ্জামান চৌধুরী ১০৪ নম্বর আসামি ছিলেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ জনকে।