গাইবান্ধা জেলার আটটি পাঠাগারে প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বিকাশের উদ্যোগে বই উপহার দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার জেলার অন্যতম বিদ্যাপীঠ গাইবান্ধা সরকারি কলেজ চত্বরে এ আয়োজন করা হয়। বেলা একটায় বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান।
বই পাওয়া পাঠাগারগুলো হলো গাইবান্ধা সদর উপজেলার টেংগরজানি বইঘর পাঠাগার, চাপাদহ বিএল উচ্চবিদ্যালয় পাঠাগার, খোলাহাটি উচ্চবিদ্যালয় পাঠাগার, খামার পীরগাছা স্বপ্নচূড়া পাঠাগার, দাড়িয়াপুর ইলা মিত্র পাঠাগার, গাইবান্ধা শহরের রেল কলোনির পথকলি শিশুদের প্রতিষ্ঠান জুম বাংলাদেশ পাঠাগার, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরের উত্তরণ পাঠাগার এবং একই উপজেলার বামনডাঙ্গা মোহনা পাঠাগার।
আয়োজকেরা বলেন, বিকাশ সারা বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাঠাগার ও বৃদ্ধাশ্রমে মোট ৭৫ হাজার বই বিতরণ করবে। আর বিকাশের নেওয়া এই বই বন্ধনের উদ্যোগের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে আছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে প্রথম আলো ট্রাস্টে বই কেনার জন্য অনুদানও দিতে পারেন গ্রাহক। অসংখ্য মানুষের ছোট ছোট অনুদানকে একত্রিত করে এই উদ্যোগের আওতায় ২০২২ সাল পর্যন্ত ৭২ হাজার ৫০০টি বই বিতরণ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের বই বিতরণ চলমান।
বই বিতরণ–পূর্ববর্তী এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন গাইবান্ধা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহতাব হোসেন মণ্ডল, খোলাহাটি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস, মিজানুর রহমান, চাপাদহ উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু জাফর, স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক উত্তম সরকার, গাইবান্ধা বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উম্মে হাবিবা, অর্থ সম্পাদক রেজাউল করিম, প্রচার সম্পাদক আসিফ আকন্দ প্রমুখ।
বই পাওয়ার পর পাঠাগারের পক্ষ থেকে বিকাশ ও প্রথম আলো ট্রাস্টকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। বইঘর পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক তাওহীদ উল সরকার বলেন, ‘উপহারের বইগুলো পেয়ে আমরা আনন্দিত। এই বইয়ের মাধ্যমে আমাদের পাঠাগারটি আরও সমৃদ্ধ হবে। সেরা লেখকদের এসব বই এলাকার তরুণ প্রজন্ম ও পাঠকদের পাঠাভ্যাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
জুম বাংলাদেশ স্কুলের সমন্বয়ক নিশাত তাসনিম জানান, এ বিদ্যালয়ে নিম্ন আয়ের পরিবারের পথকলি শিশুরা লেখাপড়া করে। তারা সুবিধাবঞ্চিত শিশু। তাদের বই কেনার সামর্থ্য নেই। তাদের জন্য আলাদা করে পাঠাগারের কেউ চিন্তা করে না। স্কুলে ছোট আকারে পাঠাগার থাকলেও শিশুদের উপযোগী তেমন বই ছিল না। বিকাশ ও প্রথম আলো ট্রাস্ট থেকে শিশুদের উপযোগী বই দেওয়ায় শিশুরা উপকৃত হবে।
মোহনা পাঠাগারের সভাপতি শেখ রাশেদুজ্জামান বলেন, বইয়ের চেয়ে ভালো বন্ধু আর হয় না। অথচ বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম বই পড়ে না। তাদের বইমুখী করতে হবে। বিকাশ ও প্রথম আলো ট্রাস্টের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয় কাজ।
স্বপ্নচূড়া পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক শামীম সরকার বলেন, ‘প্রথম আলো ভালো কাজ করে। গ্রামাঞ্চলের পাঠাগারকে বাছাই করে বই দেওয়া তাদের আরও একটি ভালো কাজ। আমরা গ্রামে ছোট্ট একটি পাঠাগার করেছি। সেখানে আমাদের স্কুলের ছেলেমেয়েরা পড়তে যায়। তাদের পাঠাগারে যেতে আরও উৎসাহিত করব।’
গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান বলেন, বর্তমানে স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়ে গেছে। কিশোর–কিশোরীরা স্মার্টফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে। অনেকে এখান থেকে খারাপ দিকগুলো গ্রহণ করছে। এখন সাইবার অপরাধ বেড়েছে। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।
এসব পথ থেকে তাদের ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় তাদের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা। কিন্তু সে অনুপাতে পাঠাগার নেই। থাকলেও পর্যাপ্ত বই নেই। এই বাস্তবতায় বিকাশ ও প্রথম আলো ট্রাস্টের বই বিতরণ দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ ও প্রশংসনীয়।