‘বাবা হামার ছলডা প্রাইমারি ইশকুলত দপ্তরির কাজ করে। হঠাৎ আজক্যা বিকালত পুলিশ ইশকুলত য্যায়ে হামার ছলডাক ধরে থানাত আনিচে। হামার ছলত চোর-ডাকাত লয়। ইক্কাকে ক্যান ধরে আনল ক্যান? থানায় অ্যাসে পুলিশ কওচে হামার ছলের নামে রাজনীতিক মামলা-মকদ্দমা আছে। হামার ছল বলে ২০১৮ সালত মারামারি করিচে। হামার ছল কোন মারামারি করেনি বা। হামার ছল আমেলীগ (আওয়ামী লীগ) করোচল মানষে শত্রুতা করে মিথ্যা মামলাত নাম দিচে। সরকার কচে মামলাত নাম থাকলেই ধরবে না, আগে বলে খোঁজ লিবে (তদন্ত) করবে। পুলিশ খোঁজ না লিয়ে মোর ছলক ধরল ক্যা?’ গতকাল রোববার বিকেলে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার হাজতে থাকা ছেলে আবদুল হাই ওরফে সাফিকে (৪০) দেখতে এসে তাঁর বৃদ্ধ মা শাহিদা খাতুন (৭০) আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন।
শাহিদা খাতুনের ছোট ছেলে আবদুল হাইকে গতকাল বিকেলে তাঁর কর্মস্থল আক্কেলপুরের ভানুরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তিনি ওই বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী পদে চাকরি করেন। তিনি ভানুরকান্দা গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে। আবদুল হাই উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি।
থানা-পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪ সেপ্টেম্বর রাতে স্থানীয় চায়ের দোকানে আবদুল হাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে নিয়ে কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ কয়েক শিক্ষার্থীর। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন তাঁরা। এলাকার শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে এ ঘটনার পর আবদুল হাই গা ঢাকা দেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কালাঞ্জ গ্রামের একটি বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এক বিএনপি নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর হওয়া ওই মামলার ৭৫ আসামির মধ্যে ৩৯ নম্বরে আবদুল হাইয়ের নাম আছে।
গতকাল আবদুল হাই বিদ্যালয়ে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন। খবর পেয়ে সকাল থেকে স্থানীয় ছাত্র-জনতা বিদ্যালয়ের আশপাশে অবস্থান নেন। খবর পেয়ে বিকেলে থানা-পুলিশ বিদ্যালয়ে গিয়ে আবদুল হাইকে আটক করে।
ভানুরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরিয়ম খাতুন বলেন, ২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের বাইরে দপ্তরি আবদুল হাই মারধরের শিকার হয়েছিলেন। কী কারণে মারধরের শিকার হয়েছিলেন, তা জানেন না প্রধান শিক্ষক। ওই ঘটনার পর তিনি আর বিদ্যালয়ে আসেননি। গতকাল বিদ্যালয়ে এসে দাপ্তরিক কাজ করছিলেন তিনি। পরে পুলিশ বিকেলে বিদ্যালয়ে গিয়ে তাঁকে আটক করে নিয়ে যায়।
আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী শিক্ষার্থী রাহাদ হোসেন বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আবদুল হাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে কটূক্তি করেছিলেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। তিনি গতকাল বিদ্যালয় আসার পর আমরা থানায় খবর দিয়েছি।’
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নয়ন হোসেন বলেন, বিএনপির নেতা জাকির হোসেনের মামলায় আবদুল হাই সাফিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।