জমি ‘অধিগ্রহণের টাকা’ না পেয়ে রেললাইনে প্রতিবন্ধকতা

নির্মাণাধীন আগরতলা-আখাউড়া রেলপথে বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি। গতকাল দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের শিবনগর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত নির্মাণাধীন রেলপথে বাঁশের বেড়া ও গাছ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন শাহানুর সরকার নামের এক ব্যক্তি। অনেক দৌড়ঝাঁপ করেও প্রকল্পের ‘জমি অধিগ্রহণের’ টাকা না পাওয়ায় এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

গতকাল রোববার দুপুরে আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের শিবনগর এলাকায় রেললাইনে এই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন শাহানুর সরকার। আজ সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত রেললাইনে ওই বেড়া ছিল। শাহানুর মনিয়ন্দ ইউনিয়নের খারকোট এলাকার মৃত খোরশেদ মিয়ার ছেলে। এর আগে অধিগ্রহণকৃত জায়গার ক্ষতিপূরণ পেতে ১০ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেন তিনি।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, রেলওয়ের ওই এলাকায় অধিগ্রহণ করা জায়গার ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা সবাইকে ২০১৭ সালে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের একটি তফসিল থাকে। নথিপত্র ঘেঁটে জানতে পেরেছেন, যে জায়গায় ওই লোক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন, ওই অধিগ্রহণ ও তফসিলের ভেতরে তাঁর কোনো জায়গা নেই। তারপরও সেখানে জায়গা থাকার দাবি যাচাই করা হবে। ঘটনাস্থলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সার্ভেয়ারকে পাঠানো হবে।

শাহানুর লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেছেন, শাহানুরের মা আম্বিয়া খাতুনের নামে ৭৫ নং বিএস খতিয়ানমূলে ১৬৮ দাগে সাড়ে আটক শতক জায়গা ছিল। এরপর ২০০৭ সালের ২৫ অক্টোবর একটি সাব কাবলা দলিলমূলে শিবনগর গ্রামের বাসিন্দা মিনারা বেগমের থেকে ১৬৫ বিএস দাগে ২৩ শতক নাল ভূমি কেনেন। আম্বিয়া খাতুন এই সাড়ে ৩১ শতক জমির মালিক হিসেবে ভোগদখল করছিলেন। রেললাইন স্থাপনের লক্ষ্যে আম্বিয়া খাতুনের দুই দাগে মোট ২৬ শতক জমি অধিগ্রহণ করে রেলওয়ে। ওই জায়গা দখলে নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ ব্যবহার শুরু করে এবং সেখানে রেললাইন স্থাপন করে। আম্বিয়া খাতুন ও তাঁর ওয়ারিশদের পক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ক্ষতিপূরণের জন্য যোগাযোগ করেন শাহানুর। কর্তৃপক্ষ তাদের জায়গা পরিমাপ করে অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেন। ২৬ শতক জায়গা রেল কর্তৃপক্ষ দখলে নিয়ে ভূমি শাসন, সংরক্ষণ, ভূমির আকার-আকৃতি পরিবর্তন করে ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।

শাহানুর সরকার বলেন, আগরতলা-আখাউড়া রেলপথের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু জায়গা অধিগ্রহণের চার-পাঁচ বছর পার হলেও এখনো এক টাকাও পরিশোধ করেনি রেলের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর। প্রায় পাঁচ মাস অসুস্থ শরীর নিয়ে রেলের বিভিন্ন দপ্তর, বিভাগীয় কার্যালয় ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দৌড়ঝাঁপ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনো সমাধান না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে তাঁর যতটুকু জমি রেলের মধ্যে পড়েছে, সেই জায়গায় বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন।

শাহানুর বলেন, ‘সরকার বা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদি আমার জমির মূল্য না দিয়ে ট্রেন চালানো শুরু করে, তাহলে আমি এই রেললাইনে শুয়ে জীবন দিয়ে দেব।’