মারিয়া আক্তার টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। গত বুধবার মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে সে এক লাখ টাকা কুড়িয়ে পায়। পরে সেই টাকা নিয়ে স্কুলের এক কর্মচারীর কাছে দেয় সে। টাকাগুলো ওই দিনই মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। মারিয়ার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইকবাল গফুর।
প্রথম আলো: গণমাধ্যমে নিজের ছবি দেখেছ? কেমন লেগেছে?
মারিয়া: আমার এক চাচা তাঁর মুঠোফোনে আমার ছবি দেখিয়ে বলেছেন, ‘দেখ, তুই যে টাকা পেয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিস, সে কারণে তোকে নিয়ে ছবিসহ খবর ছাপিয়েছে।’ দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে।
প্রথম আলো: পরিবারের সদস্য ও আশপাশের মানুষেরা কী বলেছেন?
মারিয়া: আমার মা আমাকে অনেক আদর করেছেন। বলেছেন, ‘অন্যের টাকার প্রতি কখনো লোভ করবি না।’ বাবা বিদেশ থেকে ফোন করেছিলেন। তিনিও খুব খুশি হয়েছেন। ঘটনার পর এলাকার সবাই আমাকে দেখে খুবই প্রশংসা করেছে। অনেকেই আমাকে একনজর দেখতে বাড়িতেও এসেছে।
প্রথম আলো: তোমার মাদ্রাসার শিক্ষক কী বলেছেন, বন্ধুরা কী বলেছে?
মারিয়া: ঘটনার পরের দিন মাদ্রাসায় যাওয়ার পর শিক্ষকেরা আমাকে অফিস কক্ষে ডেকে নেন। আমার অনেক প্রশংসা করেন। আমাকে বলেছেন, ‘তুমি খুবই সৎ ও নির্লোভ। তুমি খুবই ভালো একটা কাজ করেছ, মাদ্রাসাকে সারা দেশে পরিচিত করিয়েছ। তুমি আমাদের গর্ব।’ এখন বন্ধুরাও আমাকে বেশি ভালোবাসছে।
প্রথম আলো: টাকাগুলো পড়ে থাকতে দেখে কী মনে হয়েছিল?
মারিয়া: প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। এক মিনিট পর তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী আসে। তাকে টাকা কুড়িয়ে পাওয়ার কথা বলি।
প্রথম আলো: টাকাগুলো তো তুমি মাদ্রাসার এক কর্মীকে দিয়েছিলে। মালিকের খোঁজ কীভাবে পাওয়া গেল?
মারিয়া: টাকার বান্ডিল নিয়ে আমি প্রথমে মাদ্রাসায় যাই। তখনো মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষক আসেননি। পরে আমাদের দপ্তরি শফি মামার হাতে টাকাগুলো দিই। তিনি গণনা করে আমাকে বলেন, সেখানে এক লাখ টাকা রয়েছে। পরে সড়কের পাশে দোকানদারদের কাছে গিয়ে টাকা কুড়িয়ে পাওয়ার কথা জানানো হয়। আধা ঘণ্টা পরেই টাকার মালিকের খোঁজ পাওয়া যায়।
প্রথম আলো: টাকার মালিক প্রথম দেখায় তোমাকে কী বলেছিলেন?
মারিয়া: শফি মামা টাকার মালিককে নিয়ে এসে আমাকে দেখিয়ে বলেন, ‘এই মেয়েটি আপনার হারিয়ে যাওয়া টাকা কুড়িয়ে পেয়েছে।’ শুনে তিনি (মালিক) আমাকে সন্তানের মতো জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘তুমি অনেক ভালো। তোমার মতো ভালো মেয়ে এ সময়ে পাওয়া খুবই কঠিন। অন্যের হাতে টাকা পড়লে আমি হয়তো আর এ টাকা ফিরে পেতাম না।’
প্রথম আলো: তোমার পরিবারের কে কে আছেন। তোমার বাবা কী করেন।
মারিয়া: বাবা সৌদি আরবে থাকেন। পরিবারে আমার মা ও ছোট বোন আছে। ছোট বোন প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
প্রথম আলো: সততার শিক্ষা কোথা থেকে পেয়েছ?
মারিয়া: আমার মা ও আমার শিক্ষকেরা এমন শিক্ষা আমাকে দিয়েছেন। মা আমাকে সব সময় অন্যের টাকার প্রতি লোভ না করতে এবং অপরিচিত কেউ কোনো কিছু দিলে না নেওয়ার জন্যও বলেন।
প্রথম আলো: টাকার মালিক তোমাকে যে তিন হাজার টাকা উপহার দিয়েছেন, সেই টাকা দিয়ে তুমি কী করেছ?
মারিয়া: পোশাক কিনেছি। কিছু টাকা আছে। সেগুলোর সঙ্গে কিছু টাকা জমিয়ে দরিদ্র শিক্ষার্থীকে পোশাক কিনে দেব।