গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতায়, মানুষের চিন্তা, বিবেক এবং মতের স্বাধীনতায় কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না। পত্রিকার সমালোচনা করুন, সেই অধিকার সবার আছে। কিন্তু কোনো পত্রিকা অফিসে হামলা বা এ ধরনের কাজ করা আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে যে এ দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। এটি আমাদের জন্য ভালো হবে না।’
আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের সিআরবি মাঠে এক গণসংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন জোনায়েদ সাকি। ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণসংলাপ’ শিরোনামে এ আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলনের চট্টগ্রাম জেলা শাখা। এতে চট্টগ্রাম, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার প্রসঙ্গে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ইসকনের ব্যানারে আওয়ামী লীগ ও ইসকনের লোকজন তাঁকে হত্যা করেছেন। ইসকনের ব্যানারে করা হয়েছে, যাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর দায় চাপে এবং মুসলিমরা খেপে হামলা করেন, যাতে এর ছবি তারা আমেরিকায় পাঠিয়ে দিতে পারে। আমরা দেখলাম, রয়টার্সের মতো সংবাদমাধ্যমে সংবাদ ছাপা হয়েছে যে চিন্ময় দাসের আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। এই হচ্ছে তাদের পরিকল্পনা। বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে পশ্চিমা দেশের কাছে এমনভাবে হাজির করার চেষ্টা করা হচ্ছে যে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী এখানে নিরাপদ নয়।’
শেখ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছেন বলে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আপনারা তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছেন। চট্টগ্রামে কোনো হামলা হতে দেননি। এই যে হামলা হচ্ছে না, তার ফলে আওয়ামী লীগের লোকজন নিজেরাই এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করছে। আজও (শুক্রবার) একটি হামলার চেষ্টা করেছে বলে শুনেছি। তাই সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করবে, তারা ফ্যাসিস্টদের দোসর, দেশি-বিদেশি এজেন্ট। তারা বাংলাদেশের অভ্যুত্থানকে, এই সরকারকে ধ্বংস করতে চায়।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশে যখন তারা (সরকার) রাজনৈতিক উত্তরণের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে, তখন অভ্যুত্থানকে কালিমালিপ্ত করার জন্য পতিত ফ্যাসিস্টরা আর তাদের দেশি-বিদেশি দোসররা মাতম শুরু করেছে। সরকারের ভেতরেও ভূত থাকতে পারে। কারণ, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এখনো দোসররা বসে আছে। কারা এখনো ঘাপটি মেরে থেকে এই সরকারকে ব্যর্থ করতে চাইছে, তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
জনগণ ক্ষমতার কেন্দ্র উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার জনগণ নির্বাচিত করেন। সরকারকে, জনপ্রতিনিধিকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এর জন্য সংবিধান ও আইন তৈরি করা দরকার। ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার করতে হবে। সাংবিধানিক পদে কেবল সরকার নিয়োগ দেবে না। সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধি নিয়োগ দেবে, যাতে যাঁরা নিয়োগ পান, তাঁদের কোনো দলের প্রতি আনুগত থাকতে না হয়। বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে হবে।
সরকারের উদ্দেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এখনো জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সবকিছু ঠিক করতে হয়তো পারেননি। আমরা এর জন্য তাদের সমালোচনা করেছি। কিন্তু তারপরও এই অন্তর্বর্তী সরকার তাদের দায়িত্ব যথাসম্ভব জনগণের স্বার্থ অনুযায়ী পরিচালনা করছে। আমরা তাদের সহযোগিতা, সমালোচনা করব। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য গণতান্ত্রিক সংবিধান, রাষ্ট্রের সংস্কার, আইনের সংস্কার আর গণতান্ত্রিক নির্বাচন দরকার। আসুন আমরা সেই নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হই, গণতান্ত্রিক শক্তি গড়ে তুলি।’
গণসংলাপে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়কারী হাসান মারুফ। বক্তব্য দেন জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. হারুন, ফেনী জেলার সমন্বয়ক কায়কোবাদ, মিরসরাইয়ের আহ্বায়ক শাম্মাসুদ্দীন মোহাম্মদ, সন্দ্বীপের সাংগঠনিক সচিব নাজিম উদ্দীন আরিফ, শিক্ষক প্রতিনিধি রিদোয়ান ফরহাদ, ছাত্রনেতা শওকত ওসমান তৌকির ও ওবায়দুল্লাহ, এম্পাওয়ারিং আওয়ার হিরোজের কলি কায়েয, বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ মান্নান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশ এসেছে। বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে আর কোনো স্বৈরাচারী দলকে আসতে দেওয়া যাবে না। সবার অধিকার নিশ্চিত করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।