গ্রামের এক পুকুরে কুমির এসেছে। এই খবর শুনে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ছোট সেই পুকুর ঘিরে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে যায়। গোপালগঞ্জের সীমান্তবর্তী বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার গ্রামটিতে কুমির দেখার ঘটনা সবার কাছেই বিস্ময়ের। বাংলাবাজার নামের ওই এলাকার প্রবীণেরাও জানালেন, এই গ্রাম বা পাশে মধুমতী নদীতে কুমির দেখা গেছে বা কুমির এসেছে—এমনটা তাঁরা কখনোই শোনেননি।
বন বিভাগ জানাচ্ছে, সুন্দরবন থেকে শত কিলোমিটার দূরের জনপদে চলে আসা কুমিরটি আসলে এসেছে ওই বন থেকেই। এক মাস আগে গবেষণার জন্য সুন্দরবনের নদী-খালে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে চারটি কুমির ছাড়া হয়েছিল। যার একটি এটি।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতে পাশের মধুমতী নদী থেকে রাস্তায় উঠে পড়ে কুমিরটি। পাশে একটি খালও ছিল। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় কয়েকজন কুমিরটিকে তাড়া করলে সেটি দ্রুতই পাশের ওই পুকুরে গিয়ে নামে। এর পর থেকেই উৎসুক মানুষ পুকুরটির পাশে ভিড় করতে শুরু করেন। ফলে কুমিরটি আর বের হতে পারেনি।
খবর পেয়ে আজ শনিবার সকালেই স্থানীয় প্রশাসনসহ বন বিভাগের কর্মীরা সেখানে যান। গতকাল সন্ধ্যার দিকে পুকুর থেকে পানি সেচে জালের সাহায্যে কুমিরটিকে ধরা হয়েছে।
বন বিভাগের কর্মীরা কুমিরটি উদ্ধার করে নিয়ে গেছেন জানিয়ে চিতলমারীর কলাতলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের রাতে (বৃহস্পতিবার) স্থানীয় কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে বাংলাবাজার এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। হেডলাইটের আলোতে তাঁরা প্রথম কুমিরটি দেখতে পান। এর মাথায় কিছু একটা লাগানো ছিল। তাঁরা তখন ওই কুমিরের ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। গতকাল ভোর থেকে কুমিরটি দেখতে মানুষের ভিড় লেগে যায়।
বন বিভাগ জানিয়েছে, সুন্দরবনের কুমিরের জীবনাচরণ ও গতিবিধি জানতে সম্প্রতি চারটি কুমিরের শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো হয়। এসব কুমির ছাড়া হয়েছিল সুন্দরবনে নদী-খালে। যার একটি বন থেকে বেরিয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি জেলার বিভিন্ন নদী–খাল ঘুরে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কুমিরটি অবস্থান করছিল গোপালগঞ্জ–বাগেরহাটের সীমান্তবর্তী মধুমতী নদীতে। যে পুকুর থেকে কুমিরটি উদ্ধার করা হয়েছে, তার উত্তর পাশেই মধুমতী নদী।
কুমিরটি সুস্থ আছে, তাকে আবারও সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা কার্যালয়ের বিভাগীয় বন সংরক্ষক (ডিএফও) নির্মল কুমার পাল। তিনি বলেন, গত ১৩ থেকে ১৬ মার্চ সুন্দরবনের করমজল কেন্দ্রের দুটি, যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ির একটি পার্ক থেকে উদ্ধার একটি এবং সুন্দরবনের প্রকৃতি থেকে ধরা একটি—মোট চারটি কুমিরের শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনে ছাড়া হয়। এর মধ্যে যে কুমিরটি এখানে ধরা পড়েছে, এটি করমজল কেন্দ্রের কুমির দম্পতি রমিও-জুলিয়েটের বাচ্চা। এটির বয়স হবে ৮ থেকে ১০ বছর।
কুমির নিয়ে গবেষণার জন্য এর শরীরে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে নদীতে অবমুক্ত করার কাজটি যৌথভাবে করছে বন বিভাগ ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)। তাদের সহযোগিতা করছে জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিআইজেড)।