পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে অনেক স্থানে গাছপালা উপড়ে গেছে। নদ-নদীর জোয়ারে পানিতে বেড়িবাঁধ উপচে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা। শত শত পুকুর ও মাছের ঘের ডুবে গেছে। প্রবল বেগে বাতাস ও বর্ষণ এখনো অব্যাহত আছে।
আজ সোমবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের জালালপুর, খ্রিষ্টানপল্লি, পশ্চিম হাজীপুর, নবীপুর, ফতেহপুরসহ পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল দিবাগত রাত ১২টার সময় জোয়ারে জালালপুর গ্রামসংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে লোকালয় প্লাবিত হয়। একই ইউনিয়নের গৈয়াতলা ও নিচকাটা জলকপাট এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরিফ বলেন, প্রবল বর্ষণ ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে কুয়াকাটার বহুতল আবাসিক হোটেলগুলোর অবকাঠামো, খাটসহ তৈজসপত্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুয়াকাটা সৈকত এলাকা এখনো ছয় থেকে সাত ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। কুয়াকাটার পাশে পশ্চিম খাজুরা এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটির বাইরের অংশ এবং সাগরের মোহনার মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামসংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি জোয়ারের চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সিদ্দিক মুন্সী বলেন, বাঁধের ঢালের ক্ষতি হয়েছে। আবার জোয়ারের চাপ বাড়লে বাঁধটি ছুটে যেতে পারে। এতে প্লাবিত হবে নিজামপুর, পুরান মহিপুর, ইউসুফপুর ও কোমরপুর গ্রাম।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে সাগরপাড়ের ধুলাসার ইউনিয়নের কাউয়ারচর ও চরগঙ্গামতি এলাকার বাঁধের বাইরের পাশের বাসিন্দারা। এই দুটি গ্রাম গতকাল রোববার দুপুরে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। এখানকার প্রায় এক হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি পানির তোড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে ঘরের থালাবাসনসহ অন্য জিনিসপত্র।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. কামাল হাসান বলেন, জোয়ারের পানির চাপ দেখে গতকালই দুর্গত এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। তবে গরু-ছাগল নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গরু-ছাগল বাঁধের ওপরে কিংবা উঁচু জায়গায় রাখা হয়েছে। তবে গত রাতের প্রবল বর্ষণে গবাদিপশুর শোচনীয় অবস্থা তৈরি হয়েছে।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যা থেকে কলাপাড়া উপজেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় লোকজনজন প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছে না। কলাপাড়া পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ে গাছপালা উপড়ে গেছে। এতে লোকজনের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। কী পরিমাণ গাছপালা উপড়ে পড়েছে, তা বন বিভাগের কলাপাড়া ও মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় প্রাথমিকভাবে জানাতে পারেনি।
পল্লী বিদ্যুতের কলাপাড়া কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক সজীব পাল বলেন, ঝড়ে বিভিন্ন জায়গায় গাছপালা উপড়ে পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে। ফলে এসব ঠিক না করে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ব্যবস্থা সচল করা যাচ্ছে না।
কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, অতিবর্ষণ ও প্রবল জোয়ারে উপজেলার ২ হাজার ৪০০ পুকুরটি এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের চার শতাধিক মাছের ঘের ডুবে গেছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ জোয়ারের পানির সঙ্গে বের হয়ে গেছে। তবে এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করা এ মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না।