খুলনায় সক্রিয় ‘কিংস পার্টি’, স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন আ.লীগের ৮ নেতা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ছয়টি আসনে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৫৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪৭ জন। ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিপক্ষে দলের আটজন নেতা স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন। সব মিলিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ১৭ জন।

খুলনায় ছয়টি আসনের মধ্যে খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ও খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রশীদুজ্জামান এবার প্রথম দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মণ্ডলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অন্য তিনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্যদেরই প্রার্থী করা হয়েছে।

নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে খুলনা-৫ (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) আসনে ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল থেকে যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাঁর তেমন জনপ্রিয়তা নেই। এ জন্য নির্বাচনে দাঁড়িয়ে আমি জনপ্রিয়তা দেখিয়ে দিতে চাই।’

সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, খুলনা-৫ আসনের মানুষের নৌকার প্রতি ব্যাপক ভালোবাসা আছে। ডুমুরিয়ায় তো নৌকা পাস করবেই। পাশাপাশি উনি (আকরাম হোসেন) যে উপজেলার মানুষ, সেখান থেকেও নৌকা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।’

খুলনার ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটিতে তৃণমূল বিএনপি, তিনটিতে বিএনএম প্রার্থী দিয়েছে। বাংলাদেশ কংগ্রেস খুলনার চারটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তাদের মধ্যে খুলনা-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক ছাড়া তেমন কেউ পরিচিত নন। বিএনএমের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এস এম আজমল হোসেন খুলনা-৪ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও তাঁকে সেভাবে কেউ চেনেন না। এ ছাড়া বাংলাদেশ জাকের পার্টি ও জাতীয় পার্টি খুলনার ছয়টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, গণতন্ত্রী পার্টি একটি করে আসনে, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী দুটি করে আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

দলীয় ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার রায় ও খুলনা সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আবেদ আলী শেখ। প্রশান্ত রায়ের রাজনৈতিক সহকারী আশীষ কুমার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘যিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁর চেয়ে আমরা বেশি যোগ্য। তাই স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছি।

খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন মো. সাঈদুর রহমান। খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন নৌকাবঞ্চিত মো. রেজভী আলম ও এস এম মোর্ত্তজা রশিদী। রেজভী আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং বর্তমানে স্পেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এস এম মোর্ত্তজা রশিদী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক হুইপ এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার ভাই। মোর্ত্তজা সর্বশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন।

রেজভী আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি, তবে নৌকার বিরুদ্ধে নয়। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আমি যেহেতু ইউরোপের একটা দেশের আওয়ামী লীগের ইউনিটে রাজনীতি করি, আমি যেন সেখানে গিয়ে বলতে পারি, আমি নিজেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি, বাংলাদেশে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে।’

খুলনা-৬ আসনের (পাইকগাছা-কয়রা) জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জি এম মাহবুবুল আলম ও যুবলীগ নেতা এস এম রাজু মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সব মিলিয়ে খুলনা-১ আসনে ৬, খুলনা-২ আসনে ৯, খুলনা-৩ আসনে ৫, খুলনা-৪ আসনে ১৪, খুলনা-৫ আসনে ৭ এবং খুলনা-৬ আসন থেকে ১২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।