রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) কর্মিসভায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুল হক দলীয় নেতাদের নিয়ে হাজির হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার বন্ধগেট-সংলগ্ন জাতীয় পাটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ কর্মিসভায় অংশ নেন তিনি।
এ সময় বক্তব্যও দিয়েছেন এই সংসদ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এতে জাপার স্থানীয় নেতারাও বিব্রত বলে জানিয়েছেন।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হক বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি এবং জাতীয় পার্টির কর্মিসভার প্রধান অতিথি সৈয়দ আবু হোসেন ওরফে বাবলা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য।
জানতে চাইলে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেব প্রামাণিক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দলীয় সভায় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত হওয়ায় ও বক্তব্য দেওয়ায় দলীয় নেতা-কর্মীরা বিব্রত। হয়তো এনামুল হক সাহেব আঁচ করতে পেরেছেন, জাপার সভায় তাঁর বিপক্ষে কিছু বলা হতে পারে, তাই তিনি উপস্থিত হয়ে থাকতে পারেন।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানায়, দুপুরে উপজেলা জাতীয় পাটির কর্মিসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলার বন্ধগেট-সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ে আসেন প্রধান অতিথি। তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুল হক ২০-২৫ জন দলীয় নেতা-কর্মী নিয়ে উপস্থিত হন। সভামঞ্চে প্রধান অতিথির পাশে বসেন এনামুল হক এবং আবু তালেব প্রামাণিকের পাশে বসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার।
সভায় সংসদ সদস্য এনামুল হক বক্তব্য দেন। এলাকার রাজনীতিতে সম্প্রীতি বজায় রয়েছে মন্তব্য করে এনামুল হক বলেন, এখানে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই। কাউকে হয়রানিও করা হয় না। সভায় জাতীয় পার্টির অনেক কর্মী-সমর্থক অংশ নেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের দলীয় স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।
সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য এনামুল হকের প্রশংসা করেন সৈয়দ আবু হোসেন ওরফে বাবলা। তিনি জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে মাঠে থাকার জন্য উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীদের বলেন। এর কিছুক্ষণ পর এনামুল হকের গাড়িতে করে সভাস্থল ত্যাগ করেন প্রধান অতিথি।
জাতীয় পার্টির কর্মিসভায় সংসদ সদস্য এনামুল হকের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এর সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রায় এক ডজন নেতা প্রথম আলোকে জানান, সংসদ সদস্যের এমন করা ঠিক হয়নি। শুধু জাতীয় পার্টি নয়, তাঁরাও এতে বিব্রত।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য এনামুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি ধরেননি। তবে সভায় উপস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সৈয়দ আবু হোসেন আমাদের সংসদ সদস্যের বন্ধু। এ ছাড়া দুজনই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। আমাদের সংসদ সদস্যের আমন্ত্রণে তিনি বাগমারায় এসেছেন। একটি সরকারি অনুষ্ঠান সেরে বাড়িতে যাওয়ার পথে জাতীয় পার্টির সভায় অংশ নিয়েছেন।’
জাপা বিরোধী দলে আছে। তাঁদের দলীয় সভায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের উপস্থিতি ও বক্তব্য দেওয়াকে কীভাবে দেখেন, জানতে চাইলে গোলাম সারওয়ার বলেন, এটা রাজনৈতিক কৌশল।