যশোর জেলার মানচিত্র
যশোর জেলার মানচিত্র

যশোরে অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে ক্লিনিকে ভাঙচুর, পরে সিলগালা

যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে অবহেলায় প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ এনে ভাঙচুর চালিয়েছেন স্বজনেরা। আজ সোমবার দুপুরে উপজেলার গ্রামীণ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীরা পালিয়ে গেলেও রোগী নিয়ে আসা দালালকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেওয়ার পাশাপাশি ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়।

ক্লিনিকটির অনুমোদন থাকলেও তা নবায়ন ছিল না বলে জানিয়েছেন যশোরের সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মারা যাওয়া প্রসূতির নাম লিমা খাতুন। তিনি যশোর সদর উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী।

স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লিমা খাতুনের প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে সোমবার ভোরে তাঁকে রুপদিয়া বাজারের গ্রামীণ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়া হয়। এরপর কোনো ধরনের পরীক্ষা–নিরীক্ষা ছাড়া ও প্রয়োজনীয় রক্তের ব্যবস্থা না করেই অস্ত্রোপচার করা হয়। তিনি একটি পূত্রসন্তান প্রসব করেন। তবে অস্ত্রোপচারের পর রক্তস্বল্পতার কারণে জ্ঞান ফিরছে না জানিয়ে তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। লিমাকে খুলনায় নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানান, অনেক আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এই খবর পেয়ে স্বজনেরা ক্লিনিকে গিয়ে তালা ঝোলানো দেখতে পান। তখন তাঁরা ক্লিনিকে ভাঙচুর চালান। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রিমা বেগমের স্বামী রফিকুল ইসলাম বলেন, অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় রিমা খাতুনের মৃত্যু হয়েছে। সিজারিয়ান অপারেশনের পরে রিমা বেগম বেঁচে আছেন বলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ভুল বুঝিয়ে ক্লিনিকে তালা মেরে দেয় এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। পরবর্তী সময়ে সেখানে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, রিমা অনেক আগেই মারা গেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দালাল চক্রের সদস্য নরেন্দ্রপুর গ্রামের এক ধাত্রী ১ হাজার ২০০ টাকা কমিশনের বিনিময়ে রিমা বেগমকে কৌশলে ওই ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করেন।

স্থানীয় নরেন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মিহির মন্ডল বলেন, প্রসূতির মৃত্যুর পর স্থানীয় ও পরিবারের লোকজন ক্লিনিক ঘেরাও করে জানালা–দরজা ভাঙচুর শুরু করেন। খবর পেয়ে তাঁরা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। স্থানীয় এক ধাত্রীকে মারধর করার উপক্রম হলে তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।

সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসান বলেন, তাঁরা জানতে পেরেছেন, কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ওই প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেননি। তদন্তে বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।