নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছেন, ‘দিঘলিয়ায় সাম্প্রদায়িক হামলা কিছুটা হলেও ঠেকাতে পেরেছি। ব্যাপকভাবে হামলা করতে পারেনি দুর্বৃত্তরা। হামলা শুরু হলেই প্রশাসন, পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। এতে একটি দেয়াল তৈরি হয়েছে। আমার নড়াইল জেলায় আর সাম্প্রদায়িক হামলা হতে দেব না। যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করব।’
মঙ্গলবার দুপরে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মাশরাফি বিন মুর্তজা এসব কথা বলেন। এ সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, জাতীয় সংসদের হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস, সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার, মনোরঞ্জন শীল গোপাল, অসীম কুমার উকিল ও পঙ্কজ দেবনাথ, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত পাল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি শ্যামল সরকার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিকেলে লোহাগড়া উপজেলা মিলনায়তনে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার্থে এক মতবিনিময় সভা করেন তাঁরা। সন্ধ্যায় শেষ হয় এ সভা। এতে ইমাম, পুরোহিত, শিক্ষক, কর্মকর্তা, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য সুধীজন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
দিঘলিয়া গ্রামের এক তরুণের বিরুদ্ধে মহানবীকে কটূক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দিঘলিয়ায় দুটি বাড়ি ভাঙচুর হয়, একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়, দিঘলিয়া বাজারের তিনটি দোকানে ভাঙচুর হয়, চারটি মন্দিরেও হামলা করা হয়। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা সদর থেকে ওই গ্রাম ১০ কিলোমিটার দূরে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, ‘আমার নবীজিকে যদি কেউ ছোট করেন, তাঁর অবশ্যই কঠিন বিচার করতে হবে। এর বিচার আমি কঠিনভাবে চেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেনেছেন। কিন্তু আপনারা বিভ্রান্তিতে কান দেবেন না। আইন হাতে তুলে নেবেন না। তবে যাঁরা জড়িত নন, তাঁরা যেন হয়রানির শিকার না হন।’
মাশরাফি বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয়েরা এসেছেন, কয়েকজন সংসদ সদস্য এসেছেন আমাদের শক্তি জোগাতে। তাঁদের ধন্যবাদ। এর আগে কখনো দেখিনি নড়াইলে সাম্প্রদায়িক গোলমাল হয়েছে। আমরা দুর্বল প্রকৃতির মানুষ নই। আপনাদের সঙ্গে আছি। হামলায় মানসিক যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। আমরা সবাই মিলে যাতে আগের মতো সম্প্রীতি বজায় রেখে চলতে পারি, সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ মাশরাফি সবশেষে বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে বলছি, ছোটবেলা থেকে নড়াইলে বড় হয়েছি। এই নড়াইল আমি দেখিনি, এই নড়াইল আমি চিনি না।’
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেন, ‘যখনই নির্বাচন আসে, তার আগে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে মাশরাফি ভূমিকা নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা এখানে পরিদর্শন করতে এসেছি।’
প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘মাশরাফি বাংলাদেশকে উঁচুতে তুলে ধরেছেন। এমন একজন সংসদ সদস্যের নড়াইলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ষড়যন্ত্র করছে। এগুলো প্রতিরোধ করে আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ব।’ স্বপন ভট্টাচার্য্য আরও বলেন, ‘দিঘলিয়ার সব কাঁচা রাস্তা পাকা করে দেব। ক্ষতিগ্রস্ত পাড়ায় ২০০ গাভি বিতরণ করা হবে।’
এদিকে এ হামলার ঘটনায় সোমবার রাতে আরেকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ নিয়ে ছয়জন গ্রেপ্তার হলেন। প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোরশেদুল আলম।
দুপুরে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুস সাত্তার, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্ক্সবাদী) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ নেতা শফিউর রহমান ও সীমা দত্ত এবং জেলার নেতারা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে রুহিন হোসেন প্রিন্স সাংবাদিকদের বলেন, অতীতে এ ধরনের ঘটনার বিচার না হওয়ায় এই সাম্প্রদায়িক হামলা বেড়েছে। এগুলো প্রতিহত করতে পাড়ায় পাড়ায় সম্প্রীতি সভা করতে হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত গোবিন্দ সাহার বাড়িতে যান। এ সময় তাঁরা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তাঁদের বক্তব্য শেষে কালের কণ্ঠ ও চ্যানেল-২৪–এর নড়াইল জেলা প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম মন্ত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানতে চান, এখন সাহাপাড়ার বাসিন্দাদের ভয় দেখানো হচ্ছে, যেন কোনো কথা প্রকাশ না করা হয়। সব কথা চেপে যেতে হবে।
এ প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গেই এলাকার নেতৃস্থানীয় কয়েকজন উত্তেজিত হয়ে ওই সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। সেখান থেকে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন তাঁরা।