জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ দফা দাবিতে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী (৫৩তম ব্যাচ) আফসানা করিম রাচি নিহতের ঘটনায় রিকশাচালককে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনার দাবিসহ তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও নির্মাণাধীন সেন্ট্রাল লাইব্রেরির একটি অংশের নাম তাঁর নামে করার দাবি রয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের সামনে জড়ো হন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা অনুষদের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। পরে শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। শিক্ষার্থীরা জানান, তাঁদের ১১ দফা দাবির কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না দেখলে তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, নিহত আফসানা করিম রাচিকে মরণোত্তর ডিগ্রি দিতে হবে এবং তাঁর পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; আফসানা করিম স্মরণে ক্যাম্পাসে স্থায়ী স্মৃতিফলক নির্মাণ করতে হবে এবং নির্মাণাধীন সেন্ট্রাল লাইব্রেরির একটি অংশের নাম তাঁর নামে করতে হবে; কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী ও ৫৩তম ব্যাচের কয়েকজনকে তদন্ত কমিটিতে পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখতে হবে এবং সব দাবি মানা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে অবগত করতে হবে; আফসানা করিমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে; সাত কর্মদিবসের মধ্যে সিন্ডিকেট মিটিং ডেকে জাবি মেডিকেল সেন্টারে মুমূর্ষু ব্যক্তির পর্যাপ্ত চিকিৎসার সুব্যবস্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে; ক্যাম্পাসে অটোরিকশা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে, বিকল্প হিসেবে প্যাডেলচালিত রিকশা ও স্টুডেন্ট শাটল চালু করতে হবে; সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং সিসিটিভি নিয়মিত মনিটরিংয়ের আওতায় রাখতে হবে; পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী রাখতে হবে এবং ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষেধের ওপর কঠোর জোর দিতে হবে; রাস্তার মোড়ে সাইড মিররের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ফুটপাত নির্মাণ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আলী চিশতি বলেন, ‘আমাদের বোন রাচির মৃত্যুর প্রতিবাদে ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আমরা ১১ দফা দাবি জানিয়েছি। ঘটনার পর প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সামনে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন তুলে ধরতে পারেনি। আমরা শুনেছি মামলা হয়েছে, কিন্তু পুলিশ যে তদন্তকাজ শুরু করেছে, এর কোনো প্রমাণ পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমাদের সামনে দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ তুলে ধরতে হবে, আর না হয় আমাদের এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাশিদুল আলম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা সবার আগে চেষ্টা করছি অপরাধীকে শনাক্ত করে তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। ইতিমধ্যে আমরা ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের বাকি দাবিগুলো বাস্তবায়নেও কাজ চলছে।’
এদিকে আফসানা করিম রাচি নিহতের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) মোহাম্মদ আবু সৈয়দ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামি করে গতকাল বুধবার রাতে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন।
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অলক কুমার দে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা দায়ের করেছে। বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চালককে শনাক্ত করা এবং বিভিন্ন রিকশার গ্যারেজের মালিকদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা চলছে।