কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটের কুমিরা অংশের যাত্রী ছাউনি ও টিকেট কাউন্টার
কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটের কুমিরা অংশের যাত্রী ছাউনি ও টিকেট কাউন্টার

কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌপথ

ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই সংস্থার বিরোধ তুঙ্গে 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঘাটে অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের স্থাপনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব থাকবে না। 

চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে যাতায়াতের প্রধান নৌপথ কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটের মালিকানা নিয়ে আবারও সরকারি দুই সংস্থার বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। এ দুই সংস্থা হলো চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। 

নদীবন্দর ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারির পরও এ ঘাটের মালিকানা ছাড়তে রাজি নয় জেলা পরিষদ। তাতে জেলা পরিষদের ইজারাদার এই নৌপথে নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করে আসছেন। অন্যদিকে প্রজ্ঞাপন জারির পর বিআইডব্লিউটিএ কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌপথে নতুন একটি প্রতিষ্ঠানকে যাত্রী পরিবহনের ছাড়পত্র দেয়। তবে তারা কার্যক্রম চালুর শুরুতে জেলা পরিষদের ইজারাদারের বাধার মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা পরিষদের ইজারাদার। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৯ সাল থেকে জেলা পরিষদ কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটের ইজারা দিয়ে আসছে। তবে ২০০৯ সালে ঘাটের মালিকানা দাবি করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এর পর থেকে এ দুই প্রতিষ্ঠানের মালিকানার দ্বন্দ্ব চলমান। এর মধ্যে ২০২০ সালে মিরসরাই-রাসমনি নদীবন্দর ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। সর্বশেষ গত ১০ ডিসেম্বর সন্দ্বীপকে উপকূলীয় নদীবন্দর ঘোষণা করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। সন্দ্বীপ উপকূলে বন্দরের ভৌগোলিক সীমানা উল্লেখ করে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ঘাটে অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জেটি, যাত্রীছাউনিসহ যাত্রী পারাপারের সুবিধায় নির্মিত স্থাপনাগুলোতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব বাতিল বলে গণ্য হবে। 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওই প্রজ্ঞাপন জারির পর ‘সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিসেস লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিএ থেকে ছয়টি অত্যাধুনিক স্পিডবোটের ছাড়পত্র সংগ্রহ করে। কয়েক দিনের মধ্যেই যাত্রী পরিবহন শুরুর পরিকল্পনা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। এ জন্য গত শনিবার কুমিরা ঘাটে টিকিট কাউন্টার ও যাত্রীছাউনি নির্মাণের পদক্ষেপ নেয় তারা। 

জানতে চাইলে সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার কুমিরা ঘাটে টিকিট কাউন্টার নির্মাণ করতে গেলে ইজারাদারের লোকজন হুমকি দেন। এ কারণে নির্মাণকাজ শুরু না করেই ঘাট থেকে ফিরে যেতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন। 

তবে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে জেলা পরিষদের ইজারাদার আদিল চৌধুরী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই অভিযোগ মিথ্যা।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের পটপরিবর্তনের পর জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়ে এই ঘাট পরিচালনা করছি।’ 

জেলা পরিষদ ও বিআইডব্লিউটিএর বক্তব্য

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এই প্রজ্ঞাপন মানতে জেলা পরিষদ বাধ্য নয় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির ইকবাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভা থেকে আসতে হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্ত আমরা মানতে বাধ্য নই।’ 

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক (পোর্ট অফিসার) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘাটে জেলা পরিষদের কিছুই নেই। আমি  ঘটনাস্থলে গিয়ে ঠিক করব কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’ 

সন্দ্বীপ উপজেলায় যাতায়াতে যাত্রী ভোগান্তির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা মো. খাদেমুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনো প্রতিদিন শত শত যাত্রী ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকেন। নারী-শিশু, রোগীদের দুর্ভোগ সীমাহীন। এমন অবস্থায় নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানের যাত্রীসেবা শুরু করতে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’